
ময়নামতিতে শীতকালীন চারা বিক্রির ধুম ! সৃজনে বিক্রি প্রায় ৪ কোটি টাকা
সৌরভ মাহমুদ হারুন, বুড়িচংঃ
কুমিল্লার ঐতিহাসিক জনপদবুড়িচং ময়নামতির সমেশপুর গ্রামে পাতা কপি, ফুল কপি, টমেটো, বিভিন্ন জাতের বেগুনের চারা উৎপাদনকারী পরিবারে বিক্রির ধুম লেগেছে।
প্রতিবছর আগাম শীতকালীন ফসল উৎপাদনে এই গ্রামের চাষীরা শ্রাবনের শেষভাগে কপি সহ বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে উঠে।
এসময় এই গ্রামের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক পরিবারের দু’শতাধিক সদস্যরা রাত-দিন চারা উৎপাদন, পরিচর্যাসহ বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় আশপাশের বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষকরা আসছে চারা ক্রয় করতে। আর কৃষি অধিদপ্তর থেকেও তাদো দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন রকম পরামর্শসহ অন্যান্য সুবিধা।
এসময়ে বা এই সৃজনে কপি সহ বিভিন্ন জাতের সবজির চারা প্রায় ৪ কোটি টাকার উর্ধে বিক্রি হচ্ছে। এতে স্বাবলম্বী হচ্ছে শত শত কৃষক।
আরো পড়ুনঃ
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি এলাকাটি অনেকটা উচু এলাকায় অবস্থিত। ফলে বিগত শতাব্দির আশির দশকের শুরুতে স্থানীয় কৃষকরা অন্যান্য শাক-সব্জি,তরিতরকারির সাথে ফুল ও বাঁধা কপি চারা উৎপাদনে জড়িয়ে পড়ে। এক সময় অপেক্ষাকৃত বেশী লাভ হওয়ায় সমেশপুর গ্রামের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক পরিবারের রুটি-রুজির প্রধান উপায় হয়ে উঠে কপি চারা উৎপাদন ও বিক্রিতে। মুলত শ্রাবনের শেষ দিকে জমি পরিচর্যা করে বীজ রোপনের উপযুক্ত করে।
এসময় দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট এবং প্রস্থে তিন বা সাড়ে তিন ফুট আকারের বীজতলা তৈরী করে। পরবর্তীতে আগষ্টের প্রথম থেকেই শুরু হয় চারা বিক্রয়। চারা বিক্রয় মৌসুমের শুরুকে এসময় বিভিন্ন বীজ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ভীড় করে। তারা নানাভাবে কৃষককে আকৃষ্ট করে তাদের কোম্পানীর চারা ব্যবহারের।
সরেজমিন বীজ তলায় কথা হয় ধনু মিয়া, সাইফুল, জাহাঙ্গীর, লতিফ, রফিজউদ্দিন, হোসেন, কাসেম, হুমায়ুন, মিন্টু, এরশাদ, নন্দু সাহা, সফিক, রাসেল, জামাল, আবাদ প্রমুখের সাথে। তারা জানান, চারা বিক্রয় লাভজনক হলেও শ্রমিকের বাজার মুল্য বেশী হওয়ায় তাদেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
এছাড়াও তাদের অভিযোগ স্থানীয় পর্যায়ে ফসলী জমিতে বাসা-বাড়ি নির্মানের কারণে অনেকস্থানে পুল,কালভার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে চারা উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, বৃষ্টি যতটা উৎপাদন ব্যহত করছে,তার চেয়ে বেশী ক্ষতি করছে এই এলাকার জলাবদ্ধতা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারা উৎপাদনকারীরা জমিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কথা হয়, মোবারক,হাশেম প্রমুখের সাথে।
তারা জানান, এবারে প্রায় ৫০ বিঘার বেশী জমিতে চারা উৎপাদন হচ্ছে। তারা আরো জানান, আমরা পরিবারের সবাই উৎপাদনে সময় দিলেও বাজার থেকে শ্রমিকের সাহায্য নিতে হয়।
প্রতিদিন ৮’শ টাকা শ্রমের মুজুরি ছাড়াও তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হয়। চারা উৎপাদন ও বিপননের ব্যস্ততা আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকবে। এজন্য অনেকে মাস চুক্তি বা চারা উৎপাদনের পুরো সময় একটা নির্দিষ্ট টাকায় শ্রমিক নিয়োগ করেছেন।
বর্তমানে প্রতিটি চারা সর্বোচ্চ ৩ টাকা মুল্যে বিক্রয় করছেন। কখনো কোন চারা কিনতে আগ্রহী কৃষক মোবাইল ফোনেও বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠালে কুরিয়ার বা বিভিন্ন যানবাহনে কওে চারা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কিরন, মাউন্টেন, ফ্রেশ, সুজুকি, হোয়াইট গোল্ড, হোয়াইট মার্বেল, জোড় ফুল, সিরাজী,৭৭, সিলভার কাপ জাতের বীজ এখানকার চাষীরা বেশী ব্যবহার করছে।
উল্লেখ্য সমেশপুরছাড়াও আশপাশের গ্রামগুলোতেও এবার কপি চারা বিক্রয় হচ্ছে। বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাঃ আফরিনা আক্তার জানান, বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৪৬ জন কৃষক পরিবার রয়েছে। কৃষি অধিদপ্তর থেকে তাদের কারিগরি সহযোগীতা দেওয়া হচ্ছে।