
প্রবাসীর পরিবারের চলাচলের রাস্তা বন্ধ- প্রাণনাশের হুমকিতে এলাকা ছাড়া
সৌরভ মাহমুদ হারুন, বুড়িচংঃ
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের কাঠালিয়া সরকার বাড়িতে তিন প্রবাসীর পরিবারের চলাচলের রাস্তা ইটের দেয়াল নির্মাণ ও গেট ওয়েল্ডিং করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তাদের বসতবাড়ি।
প্রভাবশালী প্রতিবেশী ফারুক আহমেদের কে প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আসছে ।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী পরিবারের পক্ষ থেকে বুড়িচং থানায় একাধিক অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ফারুক আহমেদের অব্যহৃত হুমকী ধামকীর কারনে পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে চলে যায়।
এতে ভয়ে ও নিরাপত্তার জন্য দুই প্রবাসীর পরিবার বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে চলে যায় ।
ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী আওলাদ হোসেন, জহিরুল কাইয়ুম ও জাকির হোসেন—তিন ভাই, সকলেই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাদের পিতা মৃত আব্দুল ছোবহান পুলিশ)। বাড়িতে রয়েছেন তাদের স্ত্রী-সন্তানরা। প্রতিবেশী ফারুক আহমেদের সঙ্গে গত সাত বছর ধরে চলাচলের রাস্তা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে।
অভিযোগে জানানো হয়, ফারুক আহমেদ কয়েকবার ভুক্তভোগীদের মারধর করেন, যার ফলে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন এবং থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় ফারুক আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে প্রবাসীদের বাড়ির প্রধান গেট কলাপসিবল ওয়েল্ডিং করে বন্ধ করে দেন এবং রাস্তায় ইট দিয়ে দেয়াল তুলে চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন। ফলে পরিবারগুলো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
প্রবাসী আওলাদ হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, “আমার স্বামী ও দেবররা বিদেশে। আমি সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে থাকি। ফারুক আমাদের মারধর করে, হাসপাতালে ভর্তি হই। অভিযোগ করেও কিছু হয়নি। এখন গেটও বন্ধ করে দিয়েছে, বাইরে যাওয়া অসম্ভব।”
অন্যদিকে, প্রবাসী জহিরুল কাইয়ুমের স্ত্রী রুবী আক্তার অভিযোগ করেন, “৭ বছর আগে ফারুক আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাওলাত নেয়। টাকা ফেরত চাইলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এমনকি এক বছর আগে আমার শাশুড়ি মারা গেলে লাশ বাড়িতে নিতে পারিনি, রাস্তায় রেখেই দাফন করি।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে একটি পরিবারের সদস্যরা রান্নাঘরের পেছনের সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ পথ দিয়ে কোনোরকমে যাতায়াত করছেন।
ঘটনার মীমাংসায় গত ২৩ জুলাই এলাকাবাসী ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ফারুক আহমেদ ওয়েল্ডিং করা গেট খুলে দেবেন ও চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করবেন। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফারুক আহমেদ বলেন, “এলাকাবাসীর সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে।”
বুড়িচং থানার দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মঞ্জুর রহমান জানান, “ঘটনার বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল রাস্তা ও গেট খুলে দেওয়া হবে। তবে শুনেছি এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি।”
এদিকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে দুই প্রবাসীর পরিবার—রুবী আক্তার ও সোনিয়া আক্তার—বাড়িঘর ছেড়ে প্রায় দেড় বছর আগে অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে পরিবারগুলো চরম মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এবং দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।