
লাকসামে ৪ মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল
জাফর আহমদ, লাকসামঃ
লাকসামের ৩৩ মুক্তিযোদ্ধাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে ৩৯ জন মুক্তিযোদ্ধা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে।
২০২১ সালের ৩ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে দাখিলীয় ওই অভিযোগের আলোকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালককে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে ছিলেন তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক।
মন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে (জামুকা) অভিযুক্ত প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে নোটিশ দিয়ে যাচাই-বাছাই করেছে বলে জানা গেছে।
ওই যাচাই বাছাইতে লাকসামের ১৪-১৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনাক্ত করে তাদের নামের পাশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মন্তব্য লিখেছেন মন্ত্রী।
মুক্তিযোদ্ধাদের স্মার্ট আইডি ও ডিজিটাল সনদ বিতরণের পূর্বে গেজেট থেকে ঐ সকল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর আরেকটি অভিযোগ জমা পড়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে।
পরবর্তীতে অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী বাতাসহ সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়।
এরপর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের গেজেট শাখা গত ১০ মার্চ ২০২২ তারিখে (জামুকা)র ৭৮ তম সভার ৩ নং আলোচ্য সুচির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৮১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে গেজেট থেকে বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
ওই প্রজ্ঞাপনে লাকসামের বড়তুফা গ্রামের বালাগাত উল্লার ছেলে মনিরুল আনোয়ার (গেজেট নং ৬৭০২) বড়বিজরা গ্রামের হাবিব উল্লার ছেলে আবুল কালাম আজাদ(গেজেট নং ৬৭৭৪) পাইকপাড়া গ্রামের আলতাফ আলীর ছেলে আনামিয়া (গেজেট নং ৬৩৪৮) ও কুন্দ্রা গ্রামের দারগ আলীর ছেলে মোঃ শফিকুর রহমান (গেজেট নং ৬৮১৩) রয়েছে।
সরকারি গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাতিলকৃত মনিরুল আনোয়ার গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন।
উক্ত মনিরুল আনোয়ার যদিও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) থেকে মশাল মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন কিন্তু সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের হয়ে নির্বাচন করেছেন বলে এলাকায় ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে।
মনিরুল আনোয়ার নিজেও স্বীকার করেছেন মন্ত্রীর শ্যালক মহব্বত আলীর চাপে পড়ে তিনি নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
মনিরুল আনোয়ারের এক ছেলে বাংলাদেশ রেলওয়েতে এবং এক মেয়ে প্রাইমারি স্কুলে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যেহেতু মনিরুল আনোয়ারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হয়েছে, সেহেতু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ছেলেমেয়েদের চাকরি থাকার বৈধতা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। নিজের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে মনিরুল আনোয়ার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী অবৈধভাবে আমার সনদ বাতিল করেছে।
এ কারণে ২০২২ সালে আমি হাইকোর্টে রিট করেছি। তার ছেলে মেয়েরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি নেয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।