
সুন্দরগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে পরিকল্পিত অপহরণ-অতঃপর পৈশাচিক
আবু বক্কর সিদ্দিক, গাইবান্ধাঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের শোভাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে পরিকল্পিত অপহরণের ৬ মাস ২১ দিন পর অপহরণকারী চক্রের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে অপহরণকারীরা অপহৃতার প্রতি চালিয়েছে পৈশাচিস্কুলছাত্রীকে পরিকল্পিত অপহরণ, অতঃপর।
জানা যায়, স্কুলছাত্রীর নামীয় বিষয়-সম্পত্তিসহ তার পিতার জমিজমা হস্তগত করতে একাধিক চক্র যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে ঐ স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে।
তারা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একই স্কুলের ছাত্রী রনজিনা আক্তার (২১) ও তার ছোট ভাই কামরুলকে পাঠিয়ে ফাঁকিতে পড়ার টেবিল থেকে পেকে নিয়ে উপজেলার শোভাগঞ্জ কলেজ মোড়স্থ মিনি-বিশ্বরোডে আনা মাত্রই ৮ সদস্যের অপহরণকারী দল মিশুক গাড়িতে করে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে।
এ ঘটনায় অপহৃতার পিতা বাদী হয়ে মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামী করে থানায় মামলা করেন ।
মামলার আসামী রনজিনা ও তার মোবাইলফোন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে তাৎক্ষণিক এসব নাম পাওয়া গেলেও অন্যদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আসামীদের সঙ্গে জড়িত একই গ্রামের আনিছুরের ছেলে শাকিল, জাহাঙ্গীর, রিঙ্কুসহ তাদের পরিবার ও স্বজনরা নানাভাবে সহযোগিতা করতে থাকেন।
এর আগে থেকে ঐ স্কুলছাত্রীর নামীয় মূল্যবান সম্পত্তিসহ তাকে দিয়ে নিজের ছোট ছেলের বিয়ে রেজিস্ট্রী করতে নানান অপচেষ্টা, হুমকি-ধামকী ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন রঙ্গের কাগজ ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর গ্রহণে মরিয়া হয়ে পড়েন স্কুলছাত্রীর চাচা আল-আমীন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার ও বড় ছেলে রাজু মিয়া।
এতে জড়িত হন ঐ স্কুলছাত্রীর বড় ফুফু, ফুফাতো ভাই, জ্যাঠা, জ্যাঠাত ভাইসহ আরো কয়েকজন।
দীর্ঘ ৬ মাস ২১ দিন পর অপহরণকারী চক্রের প্রধান আঃ রহিম ওরফে আব্দুলের কবল থেকে অপহৃতাকে উদ্ধার করেন থানা পুলিশ। এর আগে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা স্কুলছাত্রীকে নানান ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকীসহ অপকৌশলে বিভিন্ন কাগজে সহি-স্বাক্ষর গ্রহণের অপচেষ্টা চালান অপহরণে জড়িতরা।
এছাড়া, নিজেদেরকে বাচাতে তাদের দোষ এড়িয়ে কাগজে লেখা বক্তব্য অপহৃতার মাধ্যমে পাঠ করিয়ে ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করেন। তা অপহৃতার পরিবারে সরবারাহ করাসহ সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে থাকেন আসামি মোমিন, মাহিদ, শাকিল, আব্দুলসহ অন্যান্যরা।
শুধু তাই না, যদি কখনো প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ে বা পুলিশ উদ্ধার করে তখন পুলিশ ও আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের কাছে এভাবেই জবানবন্দি না দিলে তারা ধারণকৃত ভিডিওচিত্র দেখাবেন।
আর এসব ধারণকৃতচিত্র দেখালে না-কি অপহৃতা ও তার বাবা মামলার বাদীর জেল হবে, সাজা হবে। আর তখন স্কুলছাত্রীসহ তার বাবা ও বড়বোনকেও না-কি এভাবেই অপহরণ করবে।
প্রয়োজনে মেরেই ফেলবে বলে কঠোর হুমকিতে ভয়ভীতি দেখায়। এর আগে স্কুলছাত্রীকে বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর করতে ও এসব কথা কাউকে না বলতে একই ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি-ধামকী প্রদান করেছিল তার চাচা-চাচী ও চাচাত বড় ভাই।
উদ্ধার অতঃপর বিজ্ঞ আদালতের নিকট থেকে পিতার জিম্মায় এসে স্কুলছাত্রী এসব কথা খুলে বলতে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
এদিকে, আসামী আব্দুলসহ নানা ঘটনায় জড়িত অন্যান্যরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য অপহৃতার পরিবারের প্রতি নানান হুমকি-ধামকী, ভয়ভীতি প্রদান, বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ করাসহ নানান ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন।
১৩ বছর বয়সী অপহৃতা ৯ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী বলছে, সে লেখাপড়া করে বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হয়ে ভবিষ্যতে মানুষের সেবা করার স্বপ্নকে যারা নস্যাৎ করে দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই রুহুল আমীন বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। অপহৃতার গর্ভের সন্তান প্রসবের পর বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।