
লাকসামে সাংবাদিক পিতা ভাষা সৈনিক জিন্নু মিয়ার আজ ৯ম মৃত্যু বার্ষিকী
লাকসাম প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চল রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ‘‘জিনু ভাই ’’খ্যাত ভাষা সৈনিক কমরেড জিন্নতের রহমান ছিলেন বহু গুনে গুনান্নিত ও মজলুম ব্যাক্তিত্ব। চলমান সময়ের বিচারে তার জীবন ছিল দারিদ্রে নিষ্পেসিত অসাধারন মানুষ কিন্তু বহু মাত্রিকগুনের অধিকারী ছিলেন।
মহান ব্যাক্তি হিসাবে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা ক্ষেত্রে তিনি সাধারন মানুষের কল্যানে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
আজ মহান ঐ নেতার ৯ম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হচ্ছে অনেকটাই পারিবারিক ভাবে।
আজমঙ্গলবার মরহুমের নিজ বাড়ী গাজীমুড়া গ্রামে ৯ম মৃত্যু বার্ষিকীতে পারিবারিক ভাবে দিন ব্যাপি দোয়া, মুনাজাত ও কাঙ্গালীভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
এলাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে মরহুম ভাষা সৈনিক জিন্নু মিয়া সর্বদা তার স্নেহ, আচরনে সবাই যেন যুগপৎ-বিমোহিত ও উজ্জীবিত বোধ করতেন। তার সকল কিছুই যেন মনের রাখার মতো, বিশেষ করে দেশ ও দারিদ্র-মজলুম মানুষের প্রতি সংবেদনাবোধ ছিল তার স্বভাবনিহীত বিষয়।
সর্বদাদারিদ্রের রোষানলে থাকার পরও নিজের প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্র পুস্তক দোকানে বসে লোকজনের সাথে চলনে-বলনে ও আচার-আচরনে তার ধৈর্য্য, বিনয়, রুচি ও শিষ্টতা সর্বজনের সু-প্রশংসা এবং গঠনমূলক সমালোচনাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মনযোগের এমনি এক বিষয় ছিল যে, তার সাথে একবার দেখা কিংবা কথা হলে কারো স্বার্থ ছিল না কেউ কোনদিন তাকে ভূলে থাকতে।
তারা আরও জানায়, ভাষা সৈনিক জিন্নতের রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছাড়াও ১৯৪২ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত দেশ-জাতির কল্যানে বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে এবং তিনি একজন মজলুমদের নেতা হিসাবে সফল মানুষ। তিনি কখনো নিজের ও পরিবারের জন্য ভাবেনি। সব সময় সাধারন মানুষের অধিকার আদায়ে প্রায় ৭০ বছর রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
রাজনৈতিক জীবনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদ তিনি কখনো গ্রহণ করেনি।
এছাড়া তিনি ১৯৪২ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার রূপকার মজলুম নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানীর অত্যান্ত ঘনিষ্ঠজন হিসাবে তিনি এ অঞ্চলে আওয়ামী মুসলিমলীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।
১৯৭২ পরবর্তী ন্যাপ ভাষানীর জাতীয় নির্বাহী কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক, ১৯৭৪ পরবর্তীতে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (মাঃ লেঃ) কমরেড তোহার নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্ষেত মুজুর বিষয়ক সম্পাদকসহ ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসনে ভাষানী ন্যাপের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতে গিয়ে আলোচিত ব্যাক্তিত্ব হিসাবে জনমনে উঠে আসেন।
মরহুমের বড় ছেলে লাকসাম তথা কুমিল্লার সিনিয়র সাংবাদিক মশিউর রহমান সেলিম জানায়, তার দীর্ঘ ৯৩ বছর কর্ম জীবনে তার কোন লোভ-লালসা কাজ করেনি। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পেলেও গত ২ই ডিসেম্বর ২০১৬ তার জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি অনেকটাই জানান দিয়েছে তিনি কেমন মানুষ ছিলেন।
মরহুম স্ত্রী, ৫ ছেলে, ২ মেয়ে, নাতী-নাতনীসহ বহু আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন।
এমহান পিতার আদর্শের মতো তার সন্তানরাও যেন দেশের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষার্থে আন্দোলন-সংগ্রামে এগিয়ে আসবেন বলে অনেকের অভিমত।