লক্ষ্মীপুরে পুরুষদের দখলে নারী উদ্যোক্তাদের নির্মিত ৩টি মার্কেট !

অর্থনীতি আইন আদালত কুমিল্লা চট্টগ্রাম জাতীয় রাজনীতি সারাদেশ
শেয়ার করুন....,

লক্ষ্মীপুরে পুরুষদের দখলে নারী উদ্যোক্তাদের নির্মিত ৩টি মার্কেট !

তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর:

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্মিত তিনটি মার্কেট চরম অনিয়ম ও অ-ব্যবস্থাপনায় চলছে । কার তত্ত্বাবধানে এগুলো চলছে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও এটি নিশ্চিত নন। এ সুযোগে নারীদের মার্কেটগুলো ১৭ বছর ধরে পুরুষদের দখলে রয়েছে।

প্রশাসন নিরব ভুমিকা পালন করছেন। নারীদের তৈরি কুটির শিল্পের পণ্যসামগ্রী নারীদের দিয়েই বিপণন ও প্রদর্শন এবং তাদের স্ব-উদ্যোগী করার লক্ষে সরকার মহিলা মার্কেট নির্মাণ করে।

অথচ অব্যবস্থাপনার কারণে প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। মার্কেটগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়মিত তদারকিতেই রক্ষা পেতে পারে এর মূল উদ্দেশ্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ‘বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় ২০০৯ সনের প্রথম দিকে এগুলো নির্মিত হয়। প্রাপ্ত ভাড়ার শতকরা ৫ ভাগ ভূমি রাজস্ব খাতে, ১৫ ভাগ মার্কেটের রণাবেণে ও ৮০ ভাগ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ তহবিলে জমা হওয়ার কথা।

শুধুমাত্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের হায়দরগঞ্জ বাজার ও উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট এবং বাবুরহাট বাজারে তিনটি মার্কেট চালু করা হয়।

হায়দরগঞ্জের মার্কেটে শাহিদা বেগম, ফরিদা বেগম, তাছলিমা বেগম, পারভিন বেগম ও দেলোয়ারা বেগম এর নামে ৫টি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা কখনোই নিজেরা ব্যবসা করেননি। দোকান প্রতি বছরে ২০ হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়েছেন রাশেদ বেপারী, ইকবাল হোসেন, রাকিব পাটওয়ারী ও মুরাদ হোসেনের কাছে। তাঁরা শাকসবজি, হোটেল ও ক্রোকারিজের ব্যবসা করছেন।

মার্কেটটি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে উপজেলা প্রকৌশলী ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং দোকান বরাদ্দ পাওয়াদের মধ্যে ২০০৯ সনের ৬ জানুয়ারি চুক্তিনামা করা হয়েছিলো। তাতে বলা হয়েছে, প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ৪.৫৮টাকা।

বরাদ্দপ্রাপ্তরা কখনই দোকানের মালিকানা দাবি ও হস্তান্তর বা সাবলিজ দিতে পারবেন না।

মহিলা নিজে অথবা পরিবারের কোনো মহিলা সদস্য বা মহিলা কর্মচারী দিয়ে দোকান পরিচালনা করবেন। কোনো অবস্থাতেই আত্মীয় বা অনাত্মীয় পুরুষ লোককে দোকানের বিক্রেতা বা পরিচালনায় নিযুক্ত করতে পারবেন না।

মেয়াদ উত্তীর্ণ ৫ বছর মেয়াদি চুক্তিপত্রটি আর নবায়নও করা হয়নি। বরাদ্দ প্রাপ্তরা কেউই দোকানের নির্ধারিত ভাড়া ইউনিয়ন পরিষদকে ও পরিশোধ করেননি বলে জানাযায়।

দোকান বরাদ্দ পাওয়া তাছলিমা বেগম বলেন, আমরা মহিলা মানুষ হওয়ায় বাজারে বসে ব্যবসা করা সম্ভব না। তাই আমাদের নামে দেওয়া দোকানগুলো আমরা পুরুষদের নিকট (আওয়ামীলীগ কর্মী) ভাড়া দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। একবার চুক্তিপত্রও দেওয়া হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদে কয়েকবার ভাড়ার টাকা দিয়েছি। এখন আর ভাড়া দেই না। উত্তর চরবংশী ইউপির খাসেরহাট বাজারের মহিলা মার্কেটটিতে ব্যবসা পরিচালনা করছেন শহিদুল ইসলাম নামের একজন।

তিনি স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান খাঁন (২টি), নাজিবুল্লাহ ছৈয়াল ও রাশেদ খলিফার কাছ থেকে (১টি করে) ঘরগুলো ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন বলে দাবি করেছেন।

সরকারি বরাদ্দ নেওয়ার কাগজ বা কোনো ভাড়া চুক্তিনামা তিনি এখন দেখাতে পারছেননা। একই ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারটি (হাজিমারা সুইসগেইট যাওয়ার পথে) নির্জন এলাকা হওয়ায় চারটি দোকান নির্মাণের তিন মাস পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়।

এটি এখন স্থানীয় এক আ’লীগ নেতার দখলে রয়েছে। খাসেরহাটে মহিলা মার্কেটের দোকান ঘর ভাড়া দেওয়া প্রসঙ্গে মফিজুর রহমান খাঁন বলেন, আমার মেয়ে জেসমিন আক্তারের নামে বছরে ২৬০ টাকা ভূমি অফিসকে খাজনা দিয়ে আমরা ঘরটি ভোগ করছি। নিজেরা ব্যবসা না করে ভাড়া দিয়ে রেখেছি। তবে আমাদের নামে কোনো বরাদ্দের কাগজ নেই।

রুহুল আমিন খলিফা বলেন, আমার স্ত্রী রাহিমা বেগমসহ ৪ জনের নামে মার্কেটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি বয়োবৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনো ব্যবসা করতে পারছেন না বিধায় পুরুষদের কাছে ভাড়া দিয়েছি। কতো টাকা ভাড়া দেই সেটা ভূমি অফিস থেকে জানতে পারবেন।

বরাদ্দের কোনো কাগজ আছে কিনা সেটা ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলতে পারবেন।

উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক (সহকারি কমিশনার ভুমি) নিগার সুলতানা ও উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর উল্লাহ দুলাল হাওলাদার বলেন, মার্কেটগুলো ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং পরিষদ ভাড়া নেবে এমন বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এগুলো কেউ জবরদখল করে থাকতে পারবেন না।

জানা যেহেতু হয়েছে দ্রুত এগুলোর একটি ফয়সালা করা হবে। রায়পুর উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মুন্সি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। নীতিমালায় কি রয়েছে তা খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই দেখবো।

এলজিইডির লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইকরামুল হক বলেন, নির্মাণের পর আমরা এগুলো হস্তান্তর করে দেওয়ায় এখন কোনো দায়িত্বে নেই।

হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ইউনিয়ন পরিষদ বিষয়টি দেখে থাকেন।

উপজেলা হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান কাউছার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নাই। এ বিষয়ে দ্রুত খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শেয়ার করুন....,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *