লাকসামে ফয়জুন্নেছার সম্পত্তি রক্ষায় নাগরিক সমাজের সাংবাদিক সম্মেলন

আইন আদালত কুমিল্লা চট্টগ্রাম জাতীয় রাজনীতি রাজশাহী সারাদেশ
শেয়ার করুন....,

লাকসামে ফয়জুন্নেছার সম্পত্তি রক্ষায় নাগরিক সমাজের সাংবাদিক সম্মেলন

 

লাকসাম প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার লাকসামে এশিয়ার মহিয়সী প্রথম নারী জমিদার নবাব ফয়জুন্নেছার সম্পত্তি ঘিরে দালাল চক্রের তৎপরতা প্রতিরোধে এবং তার সম্পত্তি রক্ষার্থে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি আবুল কালাম বিপু।

আজ রবিবার সকালে স্থানীয় একটি অভিজাত রেস্তোরায় এ সাংবাদিক সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন নাগরিক কমিটির সদস্য শিহাব উদ্দিন আয়মন।

 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান আলহাজ্ব ইদ্রীস মজুমদার, কুমিল্লা জেলা মানব কল্যান কর্মকর্তা শাহজাহান কবির, কর্মকর্তা কামাল মিয়া, লাকসাম উপজেলা সভাপতি শহীদ উল্লাহ, সহ-সাধারণ সম্পাদক সায়েম মিয়া প্রমুখ।

 

উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে নারী নবাব ফয়জুন্নেছার সম্পত্তির চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানা যায়

 

নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী নবাব এবং প্রথিতযশা জমিদার, সাহিত্যিক ও সমাজ সেবক। ১৮৩৪ সালে লাকসামের পশ্চিমগাঁও গ্রামে এক জমিদার পরিবারে জন্ম। তার পিতা হোমনাবাদ পশ্চিমগাঁও জমিদার আহম্মদ আলী চৌধুরী, মাতা আরফান্নেচ্ছা চৌধুরানী। ১৮৬০ সালে আরেক জমিদার সৈয়দ গাজীর সাথে বিবাহ হয় তার। ১৮৮৩ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদারীর উত্তরাধিকারী হন এবং ১৯৮৫ সালে তার মায়ের মৃত্যুর পর মাতুল সম্পত্তিরও মালিক হন।

নবাব ফয়জুন্নেছার ২টি কন্যা সন্তান আসরাফুন্নেছা চৌধুরানী ও বদরুন্নেছা চৌধুরানী। ১৯০৩ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর এ নারী নবাব ফয়জুন্নেছা মৃত্যু বরণ করেন।

 

সাংবাদিক সম্মেলনের তথ্য মতে, দলিল নং ৪০৪, ইসি নং ৫৪৮, দলিল নং ৩৯২, ইসি নং-৫৪৭, ইসি নং-৫৪৬, ওয়াকফ হতে মুক্তি পত্র এবং দানপত্র দলিল নং-৫৬৬১ মূলে মালিকানা ঘিরে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।

বিশেষ করে সিএস, আরএস মূলে ২২৩৫ দাগে ১৫ শতক জমি জনচলাচলের জন্য এবং ১৯৮৬ সালে ন.ফ কলেজের নামে ২২২২ দাগে ৭১ শতক জমি রেকর্ড হয় কিন্তু ২০১৭ সালে কি ভাবে ওই সকল সম্পদ সরকারি গেজেট ভুক্ত হয়। ফলে তৎকালীন গেজেট আজ এলাকার জনমনে প্রশ্নবিদ্দ।

উক্ত জমিদার বাড়ীকে জাতীয় জাদুঘরে রূপান্তরিত করার পর থেকে নাটকীয় বাজেট খরচ, সংস্কারের মান ও সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।

বিশেষ করে ওই বাড়ী সংলগ্ন ৫০ বছরের ঐতিহ্য পশ্চিমগাঁও পোষ্ট অফিস ও মসজিদ সংলগ্ন হোষ্টেল ভবন আজ অতিস্ত সংকটে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার হয়নি। যা পচ্ছন্দের ঠিকাদারের নাটকীয়তা বিদ্যমান।

 

এ সম্পদ ঘিরে স্থানীয় দালাল চক্র ও কতিপয় হলুদ সাংবাদিকদের দৌরাত্ব যেন থামছে না। যা পৌর কর্তৃপক্ষ এ দায় এড়াতে পারে না।

স্থাণীয় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে উত্তরে আবুল কালাম বিপু বলেন, ১৮৪৮ সালে বৃটিশ শাসনামলে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গর্ভনর লর্ড ডাল হৌসি ‘‘ল্যাপস’’ নামক একটি সার্কুলার জারি করেন।

 

এ নীতিতে ছিল নবাব/জমিদারদের মৃত্যুর পর তাদের কোন উত্তরাধিকার নবাব কিংবা পুত্র সন্তান না থাকিলে, তাদের সকল সম্পত্তি বৃটিশ সরকার দখল করে নিতো।

নবাব ফয়জুন্নেছার কোন জৈষ্ঠ সন্তান না থাকায় কন্যা বদুরুন্নেছা চৌধুরানী হলেন জমিদার। তাই ফয়জুন্নেছার সকল সম্পত্তি বৃটিশ সরকার কিংবা ভারত সম্রাট অধীনে চলে যায়। সকল সম্পত্তির মালিক তৎকালীন সময় থেকে ভারত সরকার।

 

ফলে বদরুন্নেছা চৌধুরানী জমিদার প্রথা মেনে তিনি উনার আশে পাশে বসবাসরত চাকর, আত্মীয়, বিশ্বস্ত ম্যানেজার, মুন্সি ও নায়েবদের নামে কিছু কিছু সম্পত্তি ওয়াকফ হতে অবমুক্তি করে মালিকানা দিয়ে একটি দলিল সৃজন করেন। দলিল নং-৫৬৬১।

বিশেষ করে ১৮৮৮ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে সিএস জরিপে বৃটিশ সরকার তৎকালীন সময়ে জমিদার বদরুন্নেছা চৌধুরানী হতে যে অবমুক্তি দলিলটি নেয় তাদের মালিকানা সিএস খতিয়ান ১২৬-এ হুকুম দখল রেকর্ড করে দেন। দলিল নং-৫৬৬১।

 

উক্ত দলিলে উল্লেখিত কিছুদাগের সম্পত্তি এখনও তাদের ওয়ারিশগণ ভোগ দখল করে আসছে।

তিনি আরও জানান, বৃটিশ সরকার সকল সম্পত্তি তাদের নেয়ার পর ইসি নং-৫৪৮, ইসি নং-৫৪৭ ও ইসি নং-৫৪৬ রেফারেন্সের উপর ভিত্তি করে বৃটিশ সরকার ১৯৩৪ সালে বঙ্গীয় ওয়াকফ্ আইনের ৪৪ ধারায় ওয়াকফ তালিকা করে দেন তৎকালীন বৃটিশ কমিশনার সাহেব বাহাদুর ভরাভ রেজু মোহাম্মদ রাইটার্স বিল্ডিং কলিকাতা। ইসি নং-৫৪৮ ওয়াকফ শ্রেণি ছাবি লিল্লায় ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ও বদরুন্নেচ্ছা চৌধুরানীর নাম রয়েছে।

বদরুন্নেছা চৌধুরানী হতে দলিল নং-৩৯২ মোট জমির পরিমান ২১৬২৫.২৮ ডিং এর মধ্যে নিজ দখলীয় ২৯৭.৩৭ডিং এবং প্রজাবিলি ২১৩২৭.৯১ডিং। ইসি নং-৫৪৭ মোট জমিন ৬৭৪.৩২ডিং এর মধ্যে নিজ দখলীয় ৩৪.৬২ডিং এবং প্রজাবিলি ৬৩৯.৭০ডিং।

ইসি নং-৫৪৬ ওয়াকফ উল আওলাদ সূত্রে সৈয়দ শাহ আজহারুল হক একাধিক দাগে অনেক সম্পত্তির মালিক। মোট জমির পরিমান ১৯৬৩.৩৬ নিজ দখলীয় ৫৬.৯৭ডিং এবং প্রজাবিলি ১৯০৬.৩৯ডিং।

 

মুক্তিপত্র দলিল নং-৫৬৬১ মূলে সিএস খতিয়ান ১২৬, দাগ নং-২২২৫-২.৬৭ ডিং, ২২২৭-১০ ডিং, ২২২৮-৯ডিং, ২২২৯-৯ডিং এবং ২২৩৫ দাগে ৯ডিং সহ মোট ৩.২১ডিং সম্পত্তি অন্তরভুক্ত।

বিশেষ করে মুক্তিপত্র দলির মূলে প্রকৃত মালিকানা ও জমিদারী সম্পদ রক্ষার নামে স্থানীয় কতিপয় দালাল চক্র, ভুয়া রিপোর্ট ও অবৈধ কাগজপত্র বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়ে সরকারী কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে এবং ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মচারী এসব অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িত। আম মোক্তার নামা দলিল নং-১৫৬১৬/১৫৫৮ ও দলির নং-২০৩৫, দানপত্র দলিল নং-৪০৪, মোকাদ্দমা নং-১৪৭০ মূলে সম্পত্তি ব্যাক্তিমালিকানায় চলে যায়।

 

দলিল নং-১০০১১/৯৯৭৯, ছাপকবলা দলিল নং-১৪৯০২, ৮৬৭০/৮৫৩৮, দলিল নং-৫৭৭১/৫৭৫১, ১২৩৭৫, ১০০১৩/৯৯৮১, ১০০১২/৯৯৮০, ৮৩০৫ ও দলিল নং-৮৩৪৪ মূলে ওইসকল দাগে একাধিক ওয়ারিশগণ বৈধ মালিকানা রয়েছে।

 

অপরদিকে ২০২০ সালে ওয়াকফ পরিদর্শকের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে ওই দাগের সম্পত্তিগুলো ওয়াকফ্ প্রমানিত না হওয়ায় স্মারক নং-৩২/তাং-৩/১০/২০২০ইং ওয়াকফ হতে নোটিশ প্রত্যাহার সহ সকল কার্যক্রম বৈধ কাগজপত্র মালিককরা ওই সম্পত্তি ভোগ দখল করিবে বলে জানায়। ১৯৬২ এর ৫০ ধারা মতে ওই দাগের সম্পত্তিগুলো মূলত বৈধ মালিকানা কার ? প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একাধিক কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তথ্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 


শেয়ার করুন....,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *