
গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ ও দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
মোঃ হুমায়ুন কবির, গৌরীপুরঃ
ময়মনসিংহের গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলামের বহাল থাকা নিয়ে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করায় সংবাদিক সম্মেলন করেছে অভিভাবক মোস্তফা কামাল।
৪ জুলাই সোমবার বেলা ১১ টায় প্রেসক্লাব হলরুমে এসময় আরো উপস্থিত ছিলের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ,পৌর কৃষক দলের সভাপতি শাহেদ মুন্সী, স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য মুজিবুর রহমান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর এবং নিরাপত্তা কর্মীসহ মোট তিনটি পদে ২০২৪ সালের জুন-আগস্ট মাসে যে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে, তা ছিল নিয়োগ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র সৈয়দ মোঃ রফিকুল ইসলামের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই নিয়োগে আর্থিক লেনদেন এবং মেধা যাচাইয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে।
প্রধান শিক্ষকসহ তিন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা (মোকদ্দমা নং ৭৭/২০২৪) চলমান রয়েছে।
সবচেয়ে বিতর্কিত হচ্ছে প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলামের নিয়োগ ও অবস্থান।
তিনি আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত এবং বিগত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলাকারী হিসেবে একাধিক মামলার আসামি ছিলেন।
গত মাসে যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে তিনি বেশ কিছুদিন জেল-হাজতে ছিলেন।
সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী, জেলে আটক হলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা বাধ্যতামূলক হলেও, তিনি মুক্তির পর পুনরায় স্বপদে বহাল থেকে বেতন-ভাতা ভোগ করছেন।
অভিভাবক ও স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুলে তার নিয়মিত উপস্থিতি বিদ্যালয়ের পরিবেশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি এসএসসি সনদ প্রদান বাবদ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বিনা রসিদে জনপ্রতি ২০০ টাকা করে গ্রহণ করেছেন।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি যথাযথভাবে ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়নি, বরং সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির (৫-৭ আগস্ট ২০২৪) মাঝেই গোপনে পরীক্ষা ও চূড়ান্ত নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়েছে।
একই দিনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করার মতো অস্বাভাবিক তৎপরতাও নিয়োগে প্রশ্ন তুলেছে।
অভিযোগ আরও জানায়, নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র পরিপত্র অনুযায়ী প্রস্তুত হয়নি, উপস্থাপনা মূল্যায়নের ধাপও উপেক্ষা করা হয়েছে।
তদ্ব্যতীত, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শফিকুল ইসলাম সভাপতির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশই পূর্ব পরিচিত ছিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
তবে তদন্ত কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, কারণ একই নিয়োগ কমিটির সদস্যকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা স্বচ্ছ তদন্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
অভিভাবক মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, “আমরা চাই বিদ্যালয়ে স্বচ্ছ ও মেধা ভিত্তিক নিয়োগ হোক।
যেভাবে নিয়োগ হয়েছে, তা শুধু আইনবহির্ভূত নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনামকেও ক্ষুণ্ণ করছে। তাই অনতিবিলম্বে এই নিয়োগ বাতিল করে নতুনভাবে মেধাভিত্তিক নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।”
বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্ত ও বেতন-ভাতা স্থগিতের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ে সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া আমীন পাপ্পা কোন কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।