
রায়পুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কেরোয়া ভূমি অফিসের কার্যক্রম
তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের ভূমি অফিসের কার্যক্রম চলছে ৭০ বছরের পুরানো এক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। প্লাস্টার খসে পড়ছে, ছাদের ও ভবনের রড বেরিয়ে এসেছে।
যেকোন সময় ভবনটি পুকুরে ধ্বসে পড়বে। সামান্য ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
অথচ এখানেই প্রতিদিন চলছে জমি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজ- খাজনা আদায়, নামজারি, মিউটেশন, রেকর্ডপত্র সংরক্ষণসহ নানা সেবা কার্যক্রম।
অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা রয়েছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। ভবনটি অতীতের জমিদার বাড়ির অংশ হওয়ায় এটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রক্রিয়ায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৮ সালে তৎকালীন সরকার জমিদার বাড়ির সামনে রায়পুর থেকে পানপাড়া সড়কের পাশে হাসপাতাল, স্কুল ও কলেজ স্থাপন করা হয়েছিলো। স্বাধীনতার পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ভবনগুলোকে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে কিছু তালিকাভুক্ত করে বাকিগুলো করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বর্তমানে বাড়ীর সামনে সড়কের পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থাকা ভবনটিতেই চলছে কেরোয়া ইউপি ভূমি অফিসে কার্যক্রম।
এই ভবনটিই এখন ভগ্নদশায়। গত কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় -এর সময় ভবনের ছাদ ধসে পড়ার উপক্রম হয়ে ছিলো। চারটি কক্ষের পলেস্তরা খসে পড়েছে, কাঠ পচে নিচে ঝরে পড়ছে- তবুও প্রতিদিন শতাধিক মানুষ এখানে ভূমি সংক্রান্ত কাজে ভিড় করছেন। যেকোন সময় এক পাশের ভবনটি পুকুরে ধ্বসে পড়বে।
কেরোয়া ভুমি অফিসের তহসিলদার লিংকন মহাজন বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমরা জরাজীর্ণ ভবনে কাজ করছি। ভবনের পাশের কক্ষের ছাদ ভেঙে পড়েছে, যেকোন সময় ভবন পুকুরে ধ্বসে পড়বে। তবুও সেবা বন্ধ রাখতে পারিনি। দ্রুত সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
রায়পুর কেরোয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর বেগম বলেন, কেরোয়া ইউনিয়ন ভূমি ভবনটি প্রায় ৭০ বছরের পুরানো। পলেস্তরা খসে পড়ে। ভবনটি ১৫ বছর আগেই পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছিলো। ঝুঁকি এড়াতে অন্য ভবনে পাঠানো হলেও ভবন সংকটের কারণে এখানেই কাজ করতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
রায়পুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নিগার সুলতানা বলেন, ভূমি অফিস বর্তমানে অত্যন্ত পুরানো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে। আমি যোগদানের পর থেকেই শুনছি, ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি এবং নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে বাজেট ও বরাদ্দে বিলম্ব হওয়ায় আপাতত এখানেই থাকতে হচ্ছে।
অফিসের ভেতরে সংরক্ষিত রয়েছে হাজারো ভূমি রেকর্ড, খাজনা রেজিস্টার, নামজারি নথি ও নাগরিক সনদপত্র। ভবনটি যে কোনো সময় ধসে পড়লে এসব মূল্যবান সরকারি রেকর্ড স্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রায় ৭০ বছরের পুরানো জরাজীর্ণ ভবনের নিচে চলছে কেরোয়া ইউপি সরকারি ভূমি সেবা কার্যক্রম। যেন এক চলমান দুর্ঘটনার প্রতীক্ষা।