
লক্ষ্মীপুরে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণে
চরম অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে
তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুরে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য পর্যাপ্ত ও সমতাভিত্তিক পয়ঃনিষ্কাশন এবং স্বাস্থ্যবিধিসম্মত জীবন রীতিতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং খোলা জায়গায় মলত্যাগের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ চলমান।
অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি ল্যাট্রিন নির্মাণে বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ অর্থে এসব নির্মাণ কাজ চলছে। ফলে প্রশ্ন রয়েছে এসবের মান নিয়েও।
অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত তিন মাস ধরে রায়পুর, চরমোহনা, চরপাতা, চরআবাবিল, চরবংশী ইউনিয়নের ল্যাট্রিন নির্মাণ কাজ বন্ধ দেয়ার হুসিয়ারী দিয়েছেন ইউপি সদস্য ও সুবিধাভোগীরা।
এছাড়া সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে নিম্নমানের তৈরি করা ল্যাট্রিনের রিং ভেঙে ফেলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব ল্যাট্রিন নির্মাণে জেলার প্রায় সব ঠিকাদারের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারও অনিয়মে জড়িত।
জানা যায়, ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩০ জেলার ৯৮টি উপজেলায় দরিদ্র জনগণের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন স্থাপন কার্যক্রম চলছে। বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবি থেকে ৯৭ শতাংশ ঋণ নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাকি দুই শতাংশ টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দিচ্ছে সরকার।
স্থানীয় সরকার বিভাগের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। কাজ শেষ হবে চলতি বছর।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত এলাকায় সারা দেশে তিন লাখ ৫১ হাজার ২৭০টি হতদরিদ্র পরিবারে বিনামূল্যে টুইন পিট ল্যাট্রিনের কাজ চলছে। যার মধ্যে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরসহ তিন উপজেলার ৪১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সহায়তায় প্রতিটি ইউনিয়নে ২২৯টি পরিবারের তালিকা তৈরি করেন প্রকল্পের সহযোগী এনজিও জেভি-৩ ড্রপ অ্যান্ড ওয়াটার এইডের স্থানীয় প্রতিনিধিরা।
সদরের ২১টি ইউনিয়নের জন্য চার হাজার ৮০৯টি, রায়পুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের জন্য দুই হাজার ২৯০টি ও রামগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের জন্য দুই হাজার ২৯০টি করে ৯ হাজার ৩৮৯টি টয়লেট নির্মিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রতিটি টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণে ৩৫ হাজার ১০৮ টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে।
রায়পুরসহ তিন উপজেলার ৯ হাজার ৩৮৯টি ল্যাট্রিন নির্মাণে মোট ব্যায় হবে ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ২৯ হাজার ১২ টাকা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। কাজ চলছে নামকাওয়াস্তে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের এত নিম্নমানের কাজ হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
প্রতিটি ল্যাট্রিন নির্মাণে কিছু ইট, ১০টি রিং, দুটি স্ল্যাব এবং চার ইঞ্চি ব্যাসার্ধের সিমেন্টের তৈরি পিলার এবং কিছু টিন প্রয়োজন। কিন্তু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ উপকরণ প্রদানে দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে।
এদিকে ভেঙে ফেলা রিং ও স্ল্যাবগুলো জোড়াতালি দিয়ে পুনরায় ল্যাট্রিন নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি টয়লেট নির্মাণে প্রকল্প কর্তৃক ব্যয় ৩৫ হাজার ১০৮ টাকা ধরা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এগুলো নির্মাণে সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকা ব্যয় করছে।
গত ৭দিন ধরে রায়পুর, চরমোহনা, চরআবাবিল, চরবংশি ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নমানের ইটের সুড়কি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রিং ও স্ল্যাব। ভেঙে ফেলা রিং ও স্ল্যাবও জোড়াতালি দিয় ফের লাগানে হয়েছে। যার ফলে এগুলোর মান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। একটি টয়লেট পাওয়া রায়পুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চরপলোয়ান গ্রামের চৌধুরী বাড়ির দিনমজুর সলেমান বলেন, ‘ নিম্নমানের কংকর দিয়ে টয়লেট নির্মাণ করতে আসছে ঠিকাদার। এ বাড়ির পাঁচ পরিবারের টয়লেটের কাজের অবস্থা খুবই নিম্নমানের।
এ টয়লেট এক বছরও টিকবে না। এটা থেকে ভেঙে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।’ রায়পুরের চরবংশী ও চরআবাবিল ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঁচজন জানিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে জনপ্রতিনিধিরা তালিকায় নাম ওঠাতে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা নিয়েছেন।
রায়পুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী রমিজ উদ্দিন বলেন, বিশ্বব্যাংক তদন্তের পর আপনাকে তথ্য দেওয়া হবে। সাংবাদিকরা কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে আসছেন? রামগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান কথা বলতে রাজি হননি।
সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী ফাতেমাতুজ্জহুরা মনিকা বলেন, কাজের মান খারাপ হওয়ায় একটি জায়গায় তৈরি করা কয়েকটি ল্যাট্রিন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ কাজগুলো চারটি সংস্থা তদারকি করছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বিলকিস আকতার বলেন, নিম্নমানের কঙ্কর দিয়ে ল্যাট্রিন করা হচ্ছে, এমন সংবাদ পেয়েছি। আরও খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।