
কক্সবাজারে উচ্ছেদ অভিযানে হামলায় পুলিশ সদস্য আহত
ইয়ার রহমান আনান, কক্সবাজারঃ
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে হামলা চালিয়েছে একদল লোক। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে মো. করিম নামে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
ইটের আঘাতে তার মাথা ফেটে গেছে। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় চার জনকে আটক করা হয়।
মঙ্গলবার (০২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে আটক চার জনের নাম জানা যায়নি।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার থেকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে বাঁকখালী নদী দখল করে তৈরি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। প্রথম দিন কস্তুরাঘাট এলাকার প্রায় ২০০টি পাকা, আধাপাকা ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে যৌথ বাহিনী কস্তুরাঘাট এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে কিছু লোক বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের দাবি, জমিগুলো খতিয়ানভুক্ত। জোর করে বৈধ ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। বেলা ১১টার দিকে বাঁকখালী সেতুর পাশে বর্জ্যের পাহাড় এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে বিক্ষুব্ধ কিছু লোক পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন।
এ সময় ইটের আঘাতে কক্সবাজার পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল মো. করিম আহত হন। তার মাথা ফেটে যায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া চার জনকে আটক করে পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। বিকাল ৩টা পর্যন্ত শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আহত পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। এ ঘটনায় চার জনকে আটক করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত আছে।’
বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে চার মাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর ৩০ আগস্ট নৌপরিবহন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন কক্সবাজার সফরে আসেন। তখন তিনি এক সমন্বয় সভায় হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হবে।’
বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাঁকখালী নদীর তীরের ৭২১ একর জমিকে নদীবন্দর ঘোষণা করা হয়। সরকার ও জেলা প্রশাসনকে এই জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়ে ছিল।