
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফজিলত
ডেক্স নিউজঃ
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ঠিক মত আদায় করবে আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে সম্মানিত করবেন। (১) তার অভাব দূর করবেন (২) কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবেন (৩) ডান হাতে আমল নামা দেবেন (৪) বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার করাবেন ও (৫) বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
যে ব্যক্তি নামাজে অবহেলা করবে আল্লাহ তাকে ১৪টি শাস্তি দেবেন। দুনিয়াতে পাঁচটি, মৃত্যর সময় তিনটি, কবরে তিনটি, কবর থেকে উঠানোর সময় তিনটি।
মেরাজের রাতে আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে নামাজ উপহার এনেছিলেন রাসূল (সা.)। এজন্য নামাজকে মুমিনের মেরাজ বলা হয়। রাসূল (সা.) মেরাজ শেষে যখন ফিরছিলেন আল্লাহতায়ালা তাঁর উম্মতের জন্য ৫০ ওয়াক্ত নামাজের বিধান দিলেন। আল্লাহর দেওয়া উপহার নিয়ে ফেরার পথে মুসা (আ.) এর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানতে চেয়ে রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন আল্লাহতায়ালা আপনার উম্মতের উপর কী ফরজ করেছেন ? রাসূল (সা.) বললেন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তিনি বললেন আপনি আপনার পালনকর্তার নিকট ফিরে যান কারণ আপনার উম্মত তা আদায় করতে পারবে না। রাসূল (সা.) ফিরে গেলেন। আল্লাহতায়ালা কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। ফেরার সময় মুসা (আ.) বললেন আপনি আরও আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মাত এই পরিমাণও আদায় করতে পারবে না। মুসা (আ.) এর পরামর্শে কয়েক দফায় আল্লাহতায়ালার কাছে গিয়ে সর্বশেষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বাকি থাকলো। নামাজ শ্রেষ্ঠতম ইবাদত।
ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো নামাজ। ইমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। মুসলমানদের প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। মানুষ ও জিন জাতির কল্যাণ সফলতা এবং মানসিক শান্তি রয়েছে আল্লাহর ইবাদতের মধ্যেই। আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বা নামাজ যা আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সা.) উপহারস্বরূপ আনলেন গোটা উম্মাহর জন্য। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের এত গুরুত্ব রয়েছে যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তা ত্যাগ করবে সে কুফরি করার কারণে কাফের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আর যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ খুশুখুজুর (বিনয়ের) সাথে আদায় করবে আল্লাহ তাকে বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করলে সগিরা গুনাহের কাফফারা আদায় হয়ে যায়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এক জুমা থেকে অপর জুমা এবং এক রমজান থেকে অপর রমজান কাফফারা হয় সে সব গুনাহের জন্য যা এদের মধ্যবর্তী সময়ে হয় যখন কবিরা গুনাহ আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে রয়েছে বৈজ্ঞানিক উপকারিতা যা আদায় করলে মানুষের স্বাস্থ্য এবং মন দুটোই ফুরফুরে থাকে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ফজিলত। নামাজ হচ্ছে ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি এবং দ্বিতীয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ঠিক মত আদায় করবে আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে সম্মানিত করবেন। (১) তার অভাব দূর করবেন (২) কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবেন (৩) ডান হাতে আমল নামা দেবেন (৪) বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার করাবেন ও (৫) বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি নামাজে অবহেলা করবে আল্লাহ তাকে ১৪টি শাস্তি দেবেন। দুনিয়াতে পাঁচটি, মৃত্যর সময় তিনটি, কবরে তিনটি, কবর থেকে উঠানোর সময় তিনটি।
দুনিয়াতে পাঁচটিঁ : (১) তার হায়াত থেকে বরকত কমে যাবে (২) চেহারা থেকে নেকনাকারের নিদর্শন লোপ পাবে (৩)তার কোনো নেক আমলের প্রতিদান দেয়া হবে না (৪) তার কোনো দুয়া কবুল হবে না (৫) নেককারদের দোয়া থেকে সে বিরত হবে। মৃত্যুর সময় তিনটি : (১) সে অপমানিত হয়ে মারা যাবে (২ ) অনাহারে মারা যাবে (৩) এমন পিপাসার্ত অবস্থায়মারা যাবে যে তাকে পৃথিবীর সব সমুদ্রের পানি পান করালেও তার পিপাসা মিটবে না।
কবরে তিনটি : (১) কবর সংকীর্ণ হয়ে এত জোরেচাপ দেবে যে,তার পাঁজরের একদিকের হাড় বিপরীত দিকে ঢুকে যাবে (২) কবরে আগুনভর্তি করে রাখা হবে যে আগুনের জলন্ত কয়লায় রাত-দিন জলতে থাকবে (৩) তার কবরে এমন ভয়ঙ্কর বিষধর সাপ রাখা হবে যা তাকে কিয়ামত পর্যন্ত দংশন করতে থাকবে। পুনরুত্থানের সময় তিনটি : (১) কঠোরভাবে হিসাব নেয়া হবে (২) আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন (৩) জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অপর বর্ণনায় আছে বিচার দিবসে তার কপালে তিনটি লেখা থাকবে : (১) হে আল্লাহর হক নষ্টকারি (২) হে আল্লাহর অভিশপ্ত (৩) তুমি আল্লাহর হক নষ্ট করেছ তেমনিভাবে আজকে আল্লাহর রহমত থেকে বিরত হবে।
এ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এই উম্মতের শ্রেষ্ঠত্বের প্রীতক। কারো কারো মতে এই উম্মতের জন্য এমন পাঁচটি সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে যখন আল্লাহর বিশেষ নবীরা নামাজ আদায় করেছেন। যেমন আঁধার রাতে আদম (আ.) দুনিয়ায় নিক্ষিপ্ত হন। ফজরের সময় তিনি আলোর ছোঁয়া দেখে শোকরিয়াস্বরূপ দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। আল্লাহ তাআলা তা এ উম্মতের ওপর অবতীর্ণ করেছেন। জোহরের চার রাকাত ইব্রাহিম (আ.) এর স্মারক। তাঁর সন্তান ইসহাক (আ.) জন্মগ্রহণ করলে তিনি শুকরিয়াস্বরূপ চার রাকাত নামাজ আদায় করেন। আসরের চার রাকাত ওজাইর (আ.) এর স্মারক এই সময় মহান আল্লাহ তাকে জীবিত করলে তিনি শুকরিয়াস্বরূপ নামাজ আদায় করেন (কেউ কেউ আবার ইউনুস (আ.) এর কথাও বলেন)। মাগরিবের তিন রাকাত দাউদ (আ.) এর স্মৃতিবিজড়িত। এশার নামাজ আমাদের নবীজি (সা.) এর নিজে আদায় করতেন। (কারো কারো মতে এ সময় ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে মুসা (আ.) চার রাকাত নামাজ আদায় করেছেন) তাই উম্মতে মোহাম্মদির প্রতি এশার বিধান দেওয়া হয়েছে।
ফজরের নামাজের ফজিলত : ফজরের নামাজ ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক ফজিলতপূর্ণ। এটি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রথম নামাজ এবং এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। ফজরের নামাজের কিছু ফজিলত হলো : ১. যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে। ২. ফজরের নামাজ কেয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দেবে যারা রাতের আঁধারে মসজিদের দিকে হেঁটে যায় তাদের কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও। ৩. সরাসরি জান্নাতপ্রাপ্তি যে ব্যক্তি দুই শীতল (নামাজ) পড়বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর দুই শীতল (নামাজ) হলো ফজর ও আসর। ৪. রিজিকে বরকত আসবে-আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেন সকাল বেলার ঘুম ঘরে রিজিক আসতে বাধা দেয়। কেননা তখন রিজিক বণ্টন করা হয়।
জোহরের নামাজের ফজিলত : জোহরের নামাজ মুসলমানদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১. অল্প সময়ের মধ্যে অধিক সওয়াব : রাসূল (সা.)ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি জোহরের নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য দান করবেন। ২. জান্নাতের প্রতিশ্রুতি : রাসূল (সা.)বলেন যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়বে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের দ্বার খুলে দিবেন। ৩. শয়তান থেকে রক্ষা : রাসূল (সা.)বলেছেন যে ব্যক্তি জোহরের নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাকে শয়তান থেকে রক্ষা করবেন।
আছরের নামাজের ফজিলত : নবী (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি আছরের নামাজ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়বে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর রয়েছে। ২. একটি বিশেষ হাদিস : ইবনু মাযা থেকে বর্ণিত নবী (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি আছরের নামাজ পড়বে তার কাজগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে অঙ্গীকার হবে এবং সে তার দিনটি সফলভাবে অতিবাহিত করবে। ৩. আছরের নামাজে আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টি : নবী (সা.) আরো বলেছেন আছরের নামাজ এমন একটি নামাজ যার সময়ে আল্লাহতায়ালা আসমানে তাঁর বিশেষ রহমতের নজর দেন।
মাগরিব নামাজের ফজিলত : ১. মাগরিব নামাজের দোয়া ও ফজিলত : নবী (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজ পড়বে তার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ রহমত এবং সে নিরাপদ থাকবে। ২. মাগরিব নামাজের পর দোয়ার গুরুত্ব : এক হাদিসে এসেছে নবী (সা.) বলেছেন মাগরিব নামাজের পরে যে ব্যক্তি দুই রাকআত নামাজ পড়বে তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে। ৩. মাগরিবের বিশেষ দোয়ায় আল্লাহর রহমত : মাগরিবের নামাজের পর একটি বিশেষ দোয়া পাঠের ফজিলত সম্পর্কে নবী (সা.) বলেছেন মাগরিব নামাজের পর আল্লাহ তাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন যারা ভয়ে এবং আশা নিয়ে তাঁর কাছে দোয়া করে।
এশার নামাজের ফজিলত : ১. নবী (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি ইশা নামাজ জামায়াতে পড়বে সে যেন অর্ধেক রাত্রি নামাজ পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজর এবং ইশা নামাজ জামাতে পড়বে সে আল্লাহর রহমতে নিরাপদ থাকবে। ২. নবী (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি ইশার নামাজ জামায়াতে পড়বে তার জন্য পরবর্তী দিন পর্যন্ত নিরাপত্তা থাকবে। ৩. নবী (সা.) বলেন ইশার নামাজের সময়টি এমন যে যদি কেউ এটা নিয়মিত পড়তে থাকে আল্লাহ তার সব গুনাহ মাফ করবেন যদি সে নিষ্ঠা ও ঈমানের সাথে সালাত আদায় করে।
নামাজ বান্দা ও আল্লাহর সাথে যোগাযোগের সেতু বন্ধন। ইসলামে নামাযের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহতাআলা অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে পাকে অসংখ্য হাদিস শরীফ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের ফযিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন। সুতরাং কোনো অবস্থায় নামাজ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। একা নামাজ পড়ার চেয়ে জামাতে নামাজ আদায় করার গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন জামাতে নামাজ আদায় করা একাকী নামাজ আদায় করার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি সওয়াবের। যুদ্ধের মতো কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহ জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। মহানবী (স.) জামাতে নামাজ আদায়ে গাফিলতির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে ব্যক্তি আজান শুনল এবং তার কোনো অপারগতা না থাকা সত্ত্বেও জামাতে উপস্থিত হলো না তার সালাত হবে না। পবিত্র কোরআনের আয়াত থেকে জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়। তাই জামাতে নামাজ না পড়ে গুনাহগার হওয়া এবং অসীম সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া একজন মুমিনের জন্য শোভন নয়। আল্লাহতাআলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালের সর্বোচ্চ কল্যাণ লাভে সঠিকভাবে তাঁর হুকুম পালনে নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।
(সংগৃহিত) ,,,