
কুষ্টিয়ায় বাড়ছে পদ্মার
পানি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
হৃদয় রায়হান, কুষ্টিয়াঃ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি।
গত এক সপ্তাহে পদ্মা নদীতে পানি বেড়েছে প্রায় ১৫০ সেন্টিমিটার। ভারি বর্ষণ ও ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, পদ্মার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করেছে।
এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নদী এলাকার মানুষ। ধারাবাহিক পানি বৃদ্ধির ফলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে নদীর পার্শ্ববর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষেত।
চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর এই দুই ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন দু’টিতে অবস্থিত ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কর্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ভারতে থেকে ফারাক্কা হয়ে পানি পদ্মায় পড়ছে।
গত ২ আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বুধবার সকালে উপজেলার ভাগজোত পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৪.৭২ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টের বিপৎসীমা হল ১৫.৭০ সেন্টিমিটার। সে অনুযায়ী বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার (০.৯৮ মিটার) নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
আর বুধবার (১৩ আগস্ট) হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১২ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার। এদিন গড়াই নদীর পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। দুই নদীর পানি বিপৎসীমার চেয়ে মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মা নদীতে প্রতিদিন হু হু করে পানি বাড়ছে।
দু’দিন আগেও যেসব এলাকা শুকনা ছিল। এখন সেখানে বন্যার পানিতে থই থই করছে। যেদিকে চোখ পড়ে শুধু পানি আর পানি। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তা ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ইউনিয়ন দু’টি মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দু’একদিনের মধ্যেই এসব গ্রামের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ফিলিপনগর, মরিচা, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, কলা, ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা জানান, চরাঞ্চলের নিম্নভূমি প্লাবিত হয়েছে। আবাদি জমি ও রাস্তা ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। যদিও এখনো বসতবাড়িতে পানি ওঠেনি, তবু বন্যার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
বিশেষ করে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চরের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
চিলমারী এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শেখ নুরুজ্জামান জানান, পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় শত শত বিঘা জমির ফসল ক্ষেতে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে।
সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে। মরিচা ইউনিয়নের ভূরকাপাড়া গ্রামের জামিরুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে গ্রামের হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কেন না নদীর পাড়ের ব্যাপক অংশ অরক্ষিত রয়েছে। যে কোনো সময় এসব অংশ নিদে পানি লোকালয়ে ডুকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে নদীর অরক্ষিত পাড় রক্ষা করা জরুরি।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, রাস্তাঘাটে পানি ঢুকে পড়ায় চিলমারী ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যে কোনো সময় চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পানি ঢুকে যেতে পারে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহম্মেদ বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইঊনিয়নের ১৩টি বিদ্যালয়ের শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকবে যাতে বন্যাকবলিত মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, রোপা আউশ কলা, বিভিন্ন ধরনের সবজি, ভুট্টা বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে এখনও যেসব জমিতে পানি প্রবেশ করেনি সেগুলোও আক্রান্ত বা তলিয়ে যেতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া, শুকনো খাবারসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করা করছি। তাদের প্রয়োজন হলে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো। পানি আরও বাড়তে পারে। সেজন্য আমরা যথাযথ প্রস্তুতি নিচ্ছি।
পাবনা ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুজ্জামান জাহিদ জানিয়েছেন, পদ্মা ও গড়াই নদীতে প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। আর এই পানি বৃদ্ধি কত দিন অব্যাহত থাকবে, তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।
মুরাদনগরে উপদেষ্টার ভাইয়ের মামলায় জামিনে মুক্ত ১৩ বিএনপি নেতাকর্মী