নিহত সাংবাদিক তুহিনের জানাজায় সম্পাদক কাঁদলেন

আইন আদালত জাতীয় ঢাকা তথ্যপ্রযুক্তি দুর্ঘটনা রাজনীতি সারাদেশ
শেয়ার করুন....,

নিহত সাংবাদিক তুহিনের

জানাজায় সম্পাদক কাঁদলেন

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের জানাজায় উপস্থিত হয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের জন্ম দিলেন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ-এর সম্পাদক মোঃ খায়রুল আলম রফিক। যেখানে সাধারণত অনেক গণমাধ্যম সম্পাদক শোকবার্তা পাঠিয়ে দায় শেষ করেন, সেখানে তিনি শুধু জানাজায় অংশগ্রহণই করেননি—বক্তব্য দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন, ক্ষমা চান সবার কাছে।

জানাজার ময়দানে কান্নাভেজা কণ্ঠে সম্পাদক রফিক বলেন—”তুহিন আমাদের পরিবারেরই একজন ছিল। যদি কোনোদিন আমার কোনো আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকে, তবে আমি আপনাদের সামনে মাথা নিচু করে ক্ষমা চাই। ওর ঋণ আমারও। ক্ষমা করে দিন আমাকে।”

তিনি আরও জানান, তুহিন একটি ছোট ব্যবসা করতেন, যেখানে পরিচিত অনেকেই বাকি রেখে গেছেন। তিনি অনুরোধ করেন,

“তুহিনের কাছে যারা বাকি রেখেছেন, দয়া করে সেই টাকা দিয়ে দিন। ওর পরিবারের দিকে তাকিয়ে দিনটা সহজ করুন।”

এই সময় উপস্থিত মানুষ, সহকর্মী সাংবাদিক, প্রতিবেশী—সবাই এক আবেগঘন পরিবেশে স্তব্ধ হয়ে যান। অনেকেই চোখ মুছতে থাকেন।

এক সাংবাদিক বলেন,

“আমি প্রথমবার দেখলাম, কোনো সম্পাদক কর্মরত রিপোর্টারের মৃত্যুতে এভাবে ভেঙে পড়ছেন, কাঁদছেন, নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছেন। এটা কেবল একজন সম্পাদক না, একজন মানুষ হিসেবেই ইতিহাস হয়ে থাকবে।”

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা, চিহ্নিত অভিযুক্তরা শিগগির ধরা পড়বে: পুলিশ

এদিকে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০–২৫ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে নিহতের ভাই সেলিম হোসেন বাদী হয়ে বাসন থানায় মামলাটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান।

তিনি জানান, “ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ইতোমধ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।”

ভিডিও ডিলিট করতে বলায় অস্বীকৃতি, এরপরই এলো কুপিয়ে হত্যার ঘটনা প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় শাপলা ম্যানশনের সামনে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি এক নারীকে মারধর করেন।

ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। হামলাকারীরা ভিডিও ডিলিট করতে বলেন, কিন্তু তুহিন নিজের পরিচয় দিয়ে স্পষ্টভাবে অস্বীকৃতি জানান।

এর কিছুক্ষণ পরই পাশের মসজিদ মার্কেটের সামনে তাকে ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

আবেগের পাহাড়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত এক লড়াইয়ের নাম তুহিন

সাংবাদিক তুহিনের মৃত্যু আর শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়—এটি একটি বার্তা। যারা কলম হাতে তুলে নেয় সমাজের অন্যায় তুলে ধরতে, তাদের কণ্ঠ রোধ করতেই এই ভয়াবহতা।
কিন্তু তুহিনের এই মৃত্যু প্রমাণ করলো—সত্যকে শেষ করা যায় না, কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায় না।

তুহিন নেই, কিন্তু তার সাহস আছে, তার সততা আছে—আর আছে তার ভালোবাসায় ভেজা এক সম্পাদক, যিনি কাঁদলেন, কাঁদালেন।

 

https://www.sangbadtoday.com/?p=1742


শেয়ার করুন....,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *