
গৌরীপুরে উচ্ছেদ অভিযানে অনিয়মের অভিযোগে তীব্র প্রতিক্রিয়া
মো: হুমায়ুন কবির, গৌরীপুরঃ
গত বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই গৌরীপুর পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানের পরদিন, ২৫ জুলাই শুক্রবার খোলা আকাশের নিচেই ব্যবসা চালিয়ে যেতে দেখা গেছে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে। তাদের জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, এই উচ্ছেদ কতটা কার্যকর এবং মানবিক ছিল ?
সূত্র জানায়, গৌরীপুর পৌর শহরের একটি ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে।
পরবর্তীতে আরও ৩০ বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি হয়েছে, যাতে নতুন স্কুল, সড়ক, বিপণীবিতান ও শিশু পার্ক নির্মাণের বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, এসব পরিকল্পনা জনসমক্ষে উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে পরিকল্পনার অভাবে যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠছে আবাসিক ভবন, দোকানপাট ও অন্যান্য স্থাপনা। রাস্তা দখল আর পৌরসভার দ্বৈত ভূমিকা—- বালুয়াপাড়া মোড় থেকে রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে অধিকাংশ ভবনের ছালাই এখন মূল সড়কের ওপর।
অনেকে এক ফুট, দেড় ফুট করে জায়গা বাড়িয়ে সড়ক সংকুচিত করে ফেলেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, খোদ পৌরসভাও মূল বাজার এলাকায় নিজস্ব বিপণীবিতান নির্মাণ করেছে, যা রাস্তার নির্ধারিত দূরত্ব না মেনে তৈরি হয়েছে। পুরাতন মাছ মহালের শেডে নির্মিত বিপণীবিতানও অপরিকল্পিত।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই দোকানগুলো যদি ৫-৭ ফুট পিছনে করা হতো, তাহলে রাস্তা উন্মুক্ত থাকত, যান চলাচল স্বাভাবিক থাকত।”
পরিকল্পনাহীনতা আর প্রয়োগহীন নিষেধাজ্ঞা-পাটবাজার মোড়ে ‘গাড়ি থামানো নিষেধ’ লেখা স্টিকার থাকা সত্ত্বেও সেখানে প্রতিনিয়ত গাড়ি দাঁড়ায়।
এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এছাড়া, অনেকে দাবি করেছেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ যদি হয়, তবে তা একচেটিয়া নয়, বরং কালিপুর মোড় থেকে স্টেশন রোড ও হাসপাতাল পর্যন্ত সবার ক্ষেত্রেই সমভাবে হওয়া উচিত। খাল ঢেকে দেওয়া ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অভিযোগ-পৌরসভা খালের ওপর ছাদ নির্মাণ করেছে, অথচ খালগুলোর সঙ্গে ড্রেনের সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। বরং খালগুলো এখন ড্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন।
শহরের অধিকাংশ ড্রেনের কোনো গন্তব্য নেই—এগুলো পুরোপুরি অপরিকল্পিত। ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
প্রয়োজন ধ্বংস নয়, সঠিক নেতৃত্ব-নাগরিকদের মতে, এই পৌরসভার উন্নয়নের জন্য এখন একজন সাহসী, দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রয়োজন—যিনি অপরিকল্পিত ও অবৈধ দখল ধ্বংস করে নতুন পরিকল্পিত গৌরীপুর গড়তে পারবেন।
নতুন সড়কগুলো এতটাই সরু যে, জরুরি সেবাদানকারী গাড়ি (অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস) প্রবেশ করতে পারছে না। রাস্তার দুই পাশের অবৈধ দখল অপসারণ না করলে এসব ঝুঁকি আরও বাড়বে।
জান্নাতুল বাকী ও কালীপুর বাজারে নাগরিক দুর্ভোগ-জান্নাতুল বাকী গোরস্থানে জানাজা ও দাফনের সময় স্বজনদের ভিজে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়—কোনো শেডের ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে, কালীপুর দৈনিক বাজারটি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
অথচ পরিকল্পনা থাকলে এখানে আধুনিক বাজার, যুবকদের কর্মসংস্থান কিংবা উদ্যোক্তাদের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যেত। সকল পক্ষকে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনার দাবি-নগর পরিকল্পনায় নাগরিক অংশগ্রহণ, প্রশাসন, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধি—সব পক্ষকে যুক্ত করে একটি সমন্বিত, স্বচ্ছ ও জনমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।
গৌরীপুরের উন্নয়ন এখন আর বিলাসিতা নয়, একটি জরুরি প্রয়োজন। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে সুপরিকল্পিত, সমন্বিত ও স্বচ্ছ। না হলে উচ্ছেদ, দখল আর দুর্ভোগ—এই তিনের চক্রেই আবদ্ধ থেকে যাবে শহর।
https://www.sangbadtoday.com/%e0%a6%ad%e0%a7%88%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a7%87-%e0%a6%8f%e0%a6%a8%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%a5%e0%a6%b8%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%ad%e0%a7%88%e0%a6%b0/