
লক্ষ্মীপুর পৌরসভা গুলোতে
১৪ মাস পারও কর্মপরিবেশ ফিরেনি
তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর:
দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাস পার হলেও দায়িত্বরত ইউএনও’রা সময়মত পৌরসভায় না যাওয়া বা ছুটিতে থাকায় লক্ষ্মীপুর পৌরসভা গুলোতে কর্মপরিবেশ এখনও ফিরে আসেনি।
কয়েকদিন ধরে রায়পুরের প্রশাসক (ইউএনও) ঢাকায় প্রশিক্ষনে থাকায় পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কার্যালয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে তাদের ইচ্ছে মত অফিসে আসা যাওয়া করছেন। বিগত বড় দুইটি রাজনৈতি সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই এখনও পৌরসভার বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন। সেবা নিতে যাওয়া সেবাগ্রহীতাদের সাথে কর্তাদের দুর্ব্যবহারসহ এখনও পদে পদে দিতে হচ্ছে ঘুষ, আর হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার।
এসব আচরণ শুধু সরকারি চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘনই নয়, জনগণকে সরকারি সেবাদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ধরনের আচরণ সরকারি চাকরিবিধি ২০১৮-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
পৌর নির্বার্হী কর্মকর্তা মাস-উদ মোরশেদ বলেছেন, আমি নিরুপায়। আমার বক্তব্য না নিয়ে ইউএনও’র বক্তব্য নেন। বুধবার (৫ নভেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রিনা রানী রায় ও তার ভাতিজা সহকারি লাইসেন্স কর্মকর্তা অমিত রায়সহ তিন কর্মচারি অফিস কক্ষে ঢুকেছেন ১১টা ৪০ মিনিটে। এছাড়াও একই সময়ে আর ও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারিও এসেছেন।
রিনা রানী রায় ও তার ভাতিজা অমিত রায় গত ১০ বছর ধরে একই কর্মস্থলে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। লাইসেন্স নিয়ে সেবাপ্রার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করছে। সম্প্রতি পৌরসভার সহকারি হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা ও পৌর যুবদলের আহবায়ক নুরে হেলাল মামুনকে রামগতি পৌরসভায় বদলি করা হয়।
সহকারি প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম এর সাথে আরেক কর্মকর্তা ইকবাল পাটোয়ারী র অসৌজন্যমুলক আচরণ হয়। এতে প্রকৌশল বদলী হওয়ার জন্য ইউএনও’র কাছে আবেদন করলেও তিনি এখনও পৌরসভায় রয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক অভিযোগ।
রুমা আক্তার নামের অসুস্থ্য (গর্ভবতি) কাপড় ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, তাঁর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সরকারি ফি ছিল এক হাজার ১৭৫ টাকা। কিন্তু রীনা রানী রায় আদায় করেন ২ হাজার টাকা। সঠিক সময়ে সেবা না পেয়ে ৫ ঘন্টা অপেক্ষা করে বাসায় ফিরে আসি।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা রীনা রানী রায় বসতে না দিয়ে বলেন, ‘উনার মাথায় উকুন দেখতে বলেন।
ওষুধ ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রেড লাইসেন্সের জন্য এসে দেড় ঘন্টা পৌরসভা কার্যালয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। ‘এক হাসিনার পতন হয়ে কোনও লাভ নেই। হাসিনার অনুসারীরা অনেকেই এখনও পৌরসভায় চাকরি করছে। আগের মতোই তারা এখনও সিন্ডিকেট তৈরি করে নাগরিকদের হয়রানি করেই যাচ্ছে।
পৌরসভা থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের এখনই সরাতে হবে।’ অমিত রায় নামের সহকারি লাইসেন্স কর্মকর্তা দুই ঘন্টা পর এসে বলেন কম্পিউটার নষ্ট, কাজ হবে না। পরে দেখা যায়, সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চলছে। একই অভিযোগ করে আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, “ আমি ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য গেলে অমিত রায় অসম্মানজনক আচরণ করেন।
অসৌজন্যমূলক ভাষায় কথা বলেন।
জানা গেছে, নতুন রাষ্ট্র গড়তে সংস্কারের নির্দেশ শিরোধার্য হলেও কর্মচারীদের দাপটে পৌরসভায় কর্মপরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একই ভাবে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সরকারি নির্দেশগুলো বাস্তবায়ন করা নিয়ে। দুইটি রাজনৈতিক দলের সরাসরি সমর্থক ২য়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাপটে পৌরসভায় এখনও অস্বাভাবিক কর্মপরিবেশ বিরাজ করছে। মুখে না বললেও এসব কর্মচারীর আচরণে এখনও উদ্বেগে রয়েছেন কর্মকর্তারা।
সরকারের পক্ষে সাধারণমানুষকে সেবা দেয়ার পরিধি কমছে।
সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগকৃত ইউএনওরা উপজেলা পরিষদ, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় পৌরসভায় সময় দিতে পারছেননা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নের কী হবে তা নিয়ে শঙ্কিত তারা। গত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে নতুন রাষ্ট্র গড়তে সংস্কারের নির্দেশ শিরোধার্য হলেও কর্মপরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে পৌর সচিব।
এদিকে, সরকারি চাকরিবিধি-২০১৮ অনুযায়ী সরকারি অফিসের নিয়ম ও শৃঙ্খলা-লঙ্ঘন করলে চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর তাই এটি কেউ সরকারি চাকরি চলে যাওয়ার কারণ হিসেবে তালিকায় রাখতে পারেন। কেননা, কেউ যদি অফিসের নিয়ম লঙ্ঘন করেন, তাহলে সেটা অফিসের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় এবং অন্যদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর জন্য সাময়িক সময়ের জন্য হোক, অথবা চিরতরে অভিযুক্ত কর্মচারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে পারে। একইভাবে কর্মস্থলে অসদাচরণ করলেও তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোনও কিছু পাওয়ার দাবিতে কোনও কর্মকর্তার দরজায় আঘাত করলে, গলা উঁচিয়ে তার সামনে দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে তা উপস্থাপন করা অসদাচরণের শামিল, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক কথায় বলা যেতে পারে এমন অভিযোগে চাকরি ডিসমিস হতে পারে। চাকরি চলে যাওয়ার পেছনের একটি অন্যতম প্রধান কারণ এটি। আর এই অসদাচরণ মূলত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।
যেমন- সহকর্মীদের সঙ্গে মিসবিহেভ করা, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অফিসের নিয়ম-কানুন ভঙ্গ, এমনকি অনৈতিক কার্যক্রমও অসদাচরণের শামিল। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী কাজের প্রতি অবহেলাও একজন সরকারি কর্মচারীর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেকোনও চাকরি চলে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে একটি পরিচিত কারণ কাজের প্রতি অতিরিক্ত অবহেলা।
সরকারি কর্মচারীদের মনে রাখা উচিত, এটিও চাকরি চলে যাওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ।
কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত অনুপস্থিত ও দেরিতে আসা চাকরি চলে যাওয়ার আরেকটি কারণ। কেননা এটি অফিসের শৃঙ্খলাভঙ্গ করে এবং সহকর্মীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। এজন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে। এটি না করা চাকরিবিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
এবিষয়ে রায়পুর পৌরসভা সহকারি প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রীনা রানী রায়, সহকারি লাইসেন্স কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, আমাদের বক্তব্য নেই। আপনিই (সাংবাদিক) খুঁজে বের করেন, অফিসে কারা দেরি করে আসে ও অনিয়ম করছে।
এ প্রসঙ্গে রায়পুর পৌরসভার প্রশাসক (ইউএনও) মেহেদী হাসান কাউছার বলেন, নির্ধারিত সময়ে দফতরে অনুপস্থিত থাকাটাও শাস্তিযোগ্যও অপরাধ।
এ বিষয়ে সরকার তথা আমরা সচেষ্ট রয়েছি। আমি কয়েকদিনের প্রশিক্ষনে ঢাকায় আসছি। সম্প্রতি যারা এসব কাজে যুক্ত রয়েছে রায়পুর এসেই তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।