
কুষ্টিয়ায় বাবার মৃত্যু শোক সইতে
না পেরে ছেলের আত্মহত্যা !
হৃদয় রায়হান, কুষ্টিয়াঃ
পারিবারিক কলহের জেরে ছেলে তাঁর স্ত্রীকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারছিলেন। তা দেখে ঠেকাতে যান বৃদ্ধ বাবা। এ সময় ছেলের আঘাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবাকে বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পরে রাতে অসুস্থ বাবা মারা যান। আর বাবার মৃত্যুর খবর শুনে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ছেলে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের উদয় নাতুরিয়া গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে। মৃত দুজন হলেন ওই গ্রামের শম্ভুচরণ বিশ্বাস (৮০) ও তাঁর ছেলে বিজয় কুমার (৩২)। বিজয় পেশায় মাছ বিক্রেতা ছিলেন।
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুলিশ, স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি শম্ভুচরণ বিশ্বাসের ছাগল বিক্রির ৯ হাজার টাকা নিয়ে পূজার কেনাকাটা করেন ছেলে বিজয় কুমার।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজয় আবারও বাবার কাছে টাকা চান। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।
এ নিয়ে স্ত্রী মিনতির সঙ্গে বিজয়ের কলহ বাঁধে এবং তিনি বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করেন।
তখন বিজয়কে ঠেকাতে যান তাঁর বাবা শম্ভুচরণ। এ সময় আঘাতে শম্ভুচরণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পল্লিচিকিৎসক ডেকে এনে তাঁর চিকিৎসা করা হয়। এরপর রাত ১১টার দিকে মারা যান শম্ভুচরণ। এরপর আজ শুক্রবার সকালে বাড়ির পাশের একটি গাছ থেকে বিজয় কুমারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেন স্বজনেরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুরতাল করে বাবা ও ছেলের মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
আরো পড়ুনঃ
বাগুলাট ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে গতকাল বিকেলে স্ত্রীকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারছিলেন ছেলে।
এ সময় ঠেকাতে গেলে বাবার শরীরে একটা আঘাত লাগে। এ কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মারা যান শুম্ভু। আর বাবার মৃত্যুর খবর শুনে ছেলে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আজ সকালে উদয় নাতুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেড ঘরের বারান্দায় পাশাপাশি রাখা রয়েছে বাবা ও ছেলের মরদেহ। পাশেই আহাজারি করছেন স্বজনেরা। তাঁদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন প্রতিবেশী ও উৎসুক জনতা। তাঁরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ সময় শম্ভুচরণের ছোট ছেলে ও বিজয়ের ভাই বিজন কুমার বলেন, ‘টাহা নিয়ে বাঁধিছিল।
এ সময় বউ মারতি গিয়ে এটুফোঁটা মুরব্বির গায় লাগিলি অসুস্থ হয়ছিল। ডাক্তার আনে চিকিৎসা দিছিলাম। তবুও রাতে মুরব্বি মারা গেছে। সেই অনুরাগে ভাই গলাঁয় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এখানে অন্যকিছু নেই।
’ বিজয়ের স্ত্রী মিনতি বলেন, ‘ছাগল বিক্রির টাহা দেওয়া নিয়ে বাবার সাথে দুই কথা বাঁধেছে। বাপ টাকার টেনশনে স্ট্রোক করে মারা গেছে। আর ওই জন্য মনের ভিতর খারাপ লাগেছে বলে ও (স্বামী) গলায় দড়ি নেছে।’ তাঁর ভাষ্য, শ্বশুর মারা গেছেন গতকাল রাতে। আর স্বামীর লাশের খোঁজ পাওয়া গেছে আজ সকালে। রাতের স্বামী কোথায় ছিলেন, তা তিনি জানেন না।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ছাগল বিক্রির টাকা নিয়ে বাবার সঙ্গে ছেলে তর্কে জড়ান। সম্ভবত এ কারণে বাবা স্ট্রোক করে মারা যান।
সইতে না পেরে ছেলে আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দুটি হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।