
গোদাগাড়ী এলএসডি খাদ্য গুদামে মিলেছে খাওয়ার অনুপযোগী চাউল
শিবলী সাদিক, রাজশাহীঃ
খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রিত সিদ্ধ চালের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। নিম্নমানের চাল মজুত তথ্যের ভিত্তিতে গোদাগাড়ী এলএসডি রেলবাজার খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা যায় এর বাস্তব চিত্র। খুদ মিশ্রিত নিম্নমানের চালে রয়েছে বড় ভাঙ্গা দানা, চালের গুড়া মিশ্রিত, মরা চাল, ছোট ভাঙা দানা, বিজাতীয় পদার্থ, ভিন্ন জাতের মিশ্রণ, অর্ধসিদ্ধ চালসহ বিকট গন্ধ। নির্দেশ অনুযায়ী যে পরিমাণ মিশ্রণ থাকার কথা তার ৫০ শতাংশ বেশি মিশ্রণ রয়েছে। গরীবের চালে এমন অনিয়ম হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কামাল অটো রাইস মিল, হাসেম অটো রাইস মিল, আজিজ অটো রাইস মিলের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বিনির্দেশ আছে সিদ্ধ চালের আর্দ্রতা ১৪ %, বড় ভাঙা দানা ৬%, ছোট ভাঙা দানা ২%, ভিন্ন জাতের মিশ্রণ ৮%, বিনষ্ট দানা ০.৫%, মরা দানা ০.৫%, বিবর্ণ দানা ০.৫% ধান প্রতি কেজিতে ১ টি, বিজাতীয় পদার্থ ০.৩%, খুদিময় দানা ০%, অর্ধসিদ্ধ দানা ১%, ছাটাই উত্তম হওয়ার কথা। আর গমের ক্ষেত্রে আর্দ্রতা ১৪% বিজাতীয় পদার্থ ২ %, কুঁচকানো ও অপুষ্ট দানা ১০%, বিনষ্ট দানা ৩% বিনির্দেশ রয়েছে।
সরজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, খুদিময় দানা, অর্ধসিদ্ধ দানা, বড় ভাঙা দানা, ছোট ভাঙা দানা, ভিন্ন জাতের মিশ্রণ, বিনষ্ট দানা, মরা দানাসহ বিবর্ণ দানাই ভরপুর। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গুদামঘরে চাল ও গম দেখতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে মর্মে সাফ জানিয়ে দেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে দেখতে চাইলেও মোহাম্মদ আলী বলেন, ১ জন সাংবাদিক যেতে পারবেন তবে মোবাইল ছাড়া। কোন ভিডিও ধারণ করা যাবে না।
ঘটনার দিন খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ডিলার সাইফুল ইসলামের কাছে ৫০৯ বস্তায় ১৫ হাজার ২ শ ৭০ কেজি চাল হস্তান্তর করা হয়।
এসময় অন্যত্র আরও চাল সরিয়ে নিতেও দেখা গেছে। ট্রলি, ট্রাক এবং ট্রাক্টরে করে চাল সরানোর প্রমান মিলেছে।
গোদাগাড়ী উপজেলায় মোট ২৫ জন ডিলারের মাধ্যমে সিদ্ধ চালগুলো খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কার্ডধারীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
এছাড়া
টিআর, টিসিবি, ভিজিবি ভিজিএফ, ভিজিডি প্রকল্পেও রয়েছে এই নিম্নমানের চালের বিস্তার।
নিরাপত্তা প্রহরী মনিরুজ্জামান জানান, একটি ট্রাক লোড দিয়ে পাঠানো হয়েছে এবং আরেকটি ট্রাক কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবে।
এসময় চারটি ট্রলি, ২ টি ট্রাক্টর সহ ট্রাক লোড দিয়ে বাইরে চাল সরিয়ে নিতেও দেখা গেছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোদাগাড়ী এলএসডি নাজমুল আলম জানান, উর্ধতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া গুদামের চালের মান আপনাদের দেখাতে পারবো না। আপনি তাদের অনুমতি নিয়ে আসেন।
অনুমতি নিতে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদকে ফোন করলে তিনি বলেন, আমরা গুদাম ইন্সপেকশন করেছি আমরা তো ভাল চাল পেয়েছি। আমরা সেই অনুযায়ী রিপোর্টও পাঠিয়েছি। আপনারা চাল দেখতে চাইলে আমাদের কাছে আবেদন দেন দেখার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
আবেদন করে প্রসেসিংয়ে দেরি হলে চাল অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়ার কথা জানালে এই কর্মকর্তা বলেন, আপনারা কিছু চালের নমুনা নিয়ে আসেন আমি দেখি।
পরে চালের নমুনা নিয়ে যেতে চাইলে নাজমুল আলম খুদ মিশ্রিত চাল নিতে বাধা দেন। এসময় আরও কিছু চাল দিয়ে সেগুলো নিয়ে যেতে বলেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোদাগাড়ী এলএসডি’র নাজমুল আলম।
পরে চাল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ আর্দ্রতা পরিক্ষা করেন। এতে ১৩.৮% আর্দ্রতা পাওয়া যায়। বাকি অন্যান্য মান নিয়ে ওঠে প্রশ্ন।
খুদিময় দানা, অর্ধসিদ্ধ দানা, বড় ভাঙা দানা, ছোট ভাঙা দানা, ভিন্ন জাতের মিশ্রণ, বিনষ্ট দানা, মরা দানাসহ বিবর্ণ দানার কোন উত্তর মেলেনি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী বলেন,মজুত আছে ১১ টন গম এবং ৫ হাজার টন চাল। এসব চাল দেখতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগবে। আর ১ জন যেতে চাইলে দেখাতে পারি কিন্তু কোন ভিডিও করা যাবে না।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমি ইন্সপেকশন করেছি এবং সেটি জেলায় রিপোর্ট করেছি। আমি চাল ভাল পেয়েছি।