
শেরপুরে বৃদ্ধাকে মাটিচাপার ঘটনায় ভাইরাল দম্পতিকে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিলেন প্রশাসন
ফজলুল করিম, শেরপুরঃ
শেরপুরের শ্রীবরদীতে স্ত্রীকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠা সেই স্বামী-স্ত্রী কে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রী খোরশেদা বেগম-(৬০) কে প্রায় ৭ বছর সেবা শুশ্রুষা করা বৃদ্ধ স্বামী খলিলুর রহমান মানসিক অস্থিরতায় অনেকটা রেগে গিয়ে টেনে হিচড়ে স্ত্রীকে জীবন্ত কবর দেয়ার চেষ্টা করছে এরকম একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খোশালপুর কানিপাড়া এলাকায় এমন ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন ১০ আগষ্ট রবিবার সকালে সরজমিন তদন্ত করে দেখতে পায় ঘটনার দিন বিছানায় পড়া স্ত্রীর সেবা করতে গিয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরে স্বামী খলিল।
একদিকে ছেলে মেয়ে দূরে থাকায় কিছুটা অর্থকষ্ট অন্য দিকে বিছানায় শুয়ে থাকা অসুস্থ স্ত্রীর মল-মুত্র সহ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজ করতে গিয়ে অনেকটাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ খলিলুর রহমান। এক পর্যায়ে স্ত্রী কে বাড়ির উঠোনে কিছুটা গর্ত করে মাটি চাপা দেয়ার ভয় দেখান বলে জানান বৃদ্ধ খলিল।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, খলিলুর রহমান তার স্ত্রী খোশেদা বেগমকে ঘর থেকে টেনে উঠানে নিয়ে আসছেন। এর আগেই ঘরের সামনে উঠানের একটি অংশে কোদাল দিয়ে সামান্য পরিমাণ গর্ত করে রেখেছেন।
পরে সেই গর্তের ভেতর তাকে রেখে তার ওপর কোদাল দিয়ে মাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে অসুস্থ ওই বৃদ্ধা আত্মরক্ষায় চিৎকার করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খলিল-খোশেদা দম্পতির নাতি খোকন (১৯) ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন। পরে ওই ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
এছাড়া স্থানীয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক মিডিয়া বিষয়টি ভিউ ব্যবসার দাবি করেছে বিষয়টি ঠিক না।
তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী খোশেদা বেগম। একটা সময় অনেক সেবা ও চিকিৎসা করেও কোনো সুস্থ হননি তার স্ত্রী।
বর্তমানে খলিলুর রহমান অর্থ অভাবে খোরশেদা বেগমের সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছেন না।
দীর্ঘসময় যন্ত্রণা সইতে না পেরে অতিষ্ঠ হয়ে যান খলিলুর রহমান। স্ত্রীর চিকিৎসা, ওষুধ, সেবা করতে করতে অসহ্য হয়ে রাগে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন এবং এমন ঘটনার জন্য খলিল অনুতপ্ত বলে তিনি জানান ।
প্রতিবেশীরা রহিমা জানান, সবার সঙ্গে হাসিখুশিভাবে চলাফেরা করেন খলিল। কারো সঙ্গে কখনোই ঝামেলায় জড়ান না। তার স্ত্রীর অসুস্থতার পর থেকে মন খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক যন্ত্রণা সহ্য করায় এমনটি ঘটিয়েছেন। বিষয়টি ভিডিও করে তারই নাতি ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, বিষয় টি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
সরজমিন পরিদর্শন করেছি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহাদয়ের নির্দেশে তাকে একটি হুইল চেয়ার, দোকান করার জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা এবং দুই জনের জন্য সরকারী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে শ্রিবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, ‘ভিডিও চিত্র দেখার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পাঠাই এবং আমরা তদন্ত করে দেখেছি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে বৃদ্ধ খলিল এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
ইতিমধ্যেই তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।