
দুই হাত নেই-তবুও পা দিয়েই লিখে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখেন ব্রাহ্মণপাড়ার আরশাদুল !
সৌরভ মাহমুদ হারুন, ব্রাহ্মণপাড়াঃ
জন্মের পর থেকেই প্রকৃতি যেন কঠিন এক পরীক্ষা নিয়েছে আরশাদুল ইসলামের। নেই দুইটি হাত। কিন্তু জীবনকে হার মানাতে দেয়নি এই প্রতিবন্ধী শিশুটি।
অদম্য মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর পড়াশোনার প্রতি গভীর ভালোবাসা দিয়েই সে প্রতিদিন লড়ে যাচ্ছে জীবনের সঙ্গে। পা দিয়েই লেখে, পা দিয়েই খায়, পা দিয়েই নিজের সব কাজ সেরে নেয় আরশাদুল। তার চোখেমুখে একটাই স্বপ্ন—একদিন লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটি চাকরি করবে, নিজ পায়ে দাঁড়াবে।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া এলাকায় নানাবাড়িতে বেড়ে উঠছে আরশাদুল ইসলাম। বাবা নেই, মা-ও পাশে নেই।
নানীর মমতাই তার পৃথিবী। সীমাহীন দারিদ্র্যের মাঝেও পড়াশোনা ছাড়তে রাজি হয়নি সে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে এখন মাধ্যমিক পর্যায়ে উত্তীর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এই সংগ্রামী শিশু। তবে অর্থাভাবে তার শিক্ষাজীবন বারবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর শিদলাই গ্রামে আরশাদুলের বাড়িতে যান ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা জাহান। শিশুটির সংগ্রামের গল্প শুনে আবেগাপ্লুত হন তিনি।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরশাদুলের হাতে তুলে দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাসামগ্রী।
পাশাপাশি ভবিষ্যতেও তার লেখাপড়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দেন ইউএনও।
এ সময় আরশাদুল, তার নানী ও মামাকে শিশুটির স্বপ্ন পূরণে সবসময় পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়।
সহায়তা পেয়ে খুশিতে ঝলমল করে ওঠে আরশাদুলের চোখ। ‘কী চাও?’—প্রশ্নের জবাবে সে বলে, “কিছুই চাই না।” অল্পতেই তুষ্ট এই শিশুটির সেই উত্তর যেন উপস্থিত সবাইকে নীরবে কাঁদিয়ে দেয়।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আরশাদুল ইসলামের এই অদম্য পথচলা আজ এলাকাবাসীর কাছে অনুপ্রেরণা। তার চোখের স্বপ্ন একদিন বাস্তবে রূপ নেবে—এই প্রত্যাশাই সবার।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আরশাদুলের পাশে তারা ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।