
লক্ষ্মীপুরে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অনিয়মই যেন নিয়ম
তাবারক হসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর:
প্রায় দুই বছর আগে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে লক্ষ্মীপুরে শহরের প্রায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে অভিযান চালায় সিভিল সার্জন।
এসময় ছাড়পত্র নাইসহ কয়েকটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে অনিয়ম পাওয়া গেছে। এতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সতর্ক ও জরিমানাও করা হয়। এরপর আর কোন অভিযান না হওয়ার ফলে এতে প্রতিষ্ঠানে অনিয়মই নিয়মে দাঁড়িয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সাধারণত রোগীরা একটু ভালো ও স্বস্তিদায়ক সেবা পেতে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু দুই বছর আগে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে হাসপাতালগুলোতেও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার তথ্য মিলেছে। তাহলে রোগীরা যাবেন কোথায় ? অভিজ্ঞমহলের এমন প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
রায়পুরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা রাকিব হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে রায়পুর না পুরো লক্ষ্মীপুর জেলায় বেসরকারি হাসপাতালে যেসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে সব শ্রেণির মানুষ শঙ্কিত।
কারণ আস্থা নিয়ে যে সেবা কেন্দ্রে রোগীরা যান, সেখানেই যদি এত অনিয়ম থাকে, তাহলে মানুষ আস্থা রাখবে কোথায়? তাই এখন স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত কঠোর মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে সর্ষের মধ্যে যেন কোনো ভূত ওত পেতে না থাকে, সেদিকে নজর রাখা জরুরি।
লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন অফিস জানান, সহসায় বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে অভিযান চালানো হবে। তবে আমরা যখনই অভিযানে নামি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সতর্ক এবং জরিমানা করা হচ্ছে। যেখানে অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে সেখানে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রায়পুর মর্ডান হাসপাতালের-ওয়াডবয় দ্বারা রক্তসহ বিভিন্ন প্রকার রিপোট প্রদানসহ নার্স ও রিসিপসানিষ্টদের দ্বারা রুগী ও তাদের স্বজনদের সাথে খারাফ আচরনের অভিযোগ রয়েছে।
মেঘনা হাসপাতালে রিপোটের চার্জ অতিরিক্ত নেয়াসহ রুগীদের সাথে খারাফ আচরনের অভিযোগ রয়েছে। আইডিয়াল মেডিকেল সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগের টেষ্ট করার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
অতিরিক্ত টাকা নেয়ায় কয়েক দিন এক রুগী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ছাড়পত্র ছাড়া কোন সমস্যা নেই। কোন সমস্যা হয়ে গেলে তা দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করছি।
তাছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স না থাকা, দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা না রাখা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ-সংক্রান্ত তথ্য না রাখা, ডিপ্লোমাহীন টেকনিশিয়ান দিয়ে ব্লাড কালেকশনসহ বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অনিয়ম পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি হাসপাতালের দুইজন মালিক বলেন, আমাদের যত অনিয়মই থাকুক না কেন, সিভিলসার্জন অফিসে মোটা অংকের টাকা দিলেই তা নিয়মে পরিনত হয়ে যায়। আর সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা তো সবাই বেসরকারি হাসপাতালেই বসেন। কোন অভিযান আসলে আমরা সতর্ক হয়ে যাই। যে সাংবাদিক বেশি লেখালেখি করে তাকে টাকা দিলে আর লেখেননা।
এবার বুঝেন, অনিয়মের প্রতিবাদ করলেও লাভ হয়না। রায়পুর উপজেলা বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ রোমান বলেন, ৯ বেসরকারি হাসপাতাল ও ১০টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর কাউকে ছাড়পত্র দিচ্ছেনা।
এছাড়া ও লাইসেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কাগজপত্র জমা রয়েছে। সরকার না দিলে কি করবো।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার বাহারুল আলম বলেন, কিছু অনিয়ম আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া অভিযান করা যায়না, তারপরেও দেখছি।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন বলেন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সহসায় অভিযান চালাবো।