চেয়ারম্যান হজ্বে-স্বাক্ষর জাল করে ২৩ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলেন সচিব

আইন আদালত কুমিল্লা চট্টগ্রাম জাতীয় রাজনীতি সারাদেশ
শেয়ার করুন....,

চেয়ারম্যান হজ্বে-স্বাক্ষর জাল করে ২৩ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলেন সচিব

 

তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর:

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সম্পতি চেয়ারম্যান হ্বজে যাওয়ার সুযোগে তার স্বাক্ষর জাল করে সরকারি বরাদ্ধের ২৩ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা এবং জন্মনিবন্ধন করা নিয়ে মানুষকে চরম হয়রানিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে আফসার উদ্দীন নামে এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার (সচিব) বিরুদ্ধে।

এনিয়ে গত এক মাস ধরে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে চরম দ্বন্ধ বিরাজ করছে ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে।

অভিযুক্ত আফসার উদ্দিন উপজেলার দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তার (সচিব) দায়িত্বরত।

বুধবার-বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) সরেজমিন ইউনিয়ন পরিষদ গেলে ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) আফসার উদ্দীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ এবং পরিষদকেন্দ্রিক জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণের দাবি জানান, চেয়ারম্যান, ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন নেতাকর্মীরা।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরাজিসহ ১০ জন সদস্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার উদ্দিনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগদেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।

ইউপি সদস্য বশির হাওলাদার, মোহাম্মদ আলী, দিদার মোল্লা, আবুল হোসেন ও ফাতেমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার উদ্দীন ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর এক বছর ভালই ছিলেন। তারপর থেকেই সরকারি বিভিন্ন সেবা-ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, জেলে চাল, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধনসহ প্রায় সব ধরনের সুবিধার বিনিময়ে সেবাগ্রহীতাদের সাথে দুর্ব্যাবহারসহ নিয়মিত টাকা আদায় করেন।

অনলাইনভিত্তিক ভিজিডি রেজিস্ট্রেশন য়েও দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা আরও জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পর আফসার উদ্দীন বেপরোয়া হয়ে গেছেন। মেম্বারদের সাথে দ্বন্ধ লাগিয়ে রেখেছে।

সম্প্রতি চেয়ারম্যান হ্বজে গেলে এসুযোগে তার স্বাক্ষর জাল করে আফসার উদ্দীন টিআর-কাবিকার বরাদ্ধের ২৩ লাখ টাকার প্রথম কিস্তি তুলতে যায় পিআইও অফিসে। তখন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) চেয়ারম্যান না আসায় ওই চেক বাতিল করেছেন। তখনই বিষয়টি আমরা পরিষদের সকল সদস্য জানতে পেরেছি। ওই প্রকল্পের কাজ শুরু না হতেই কিছু টাকা উত্তোলনও করা হয়েছে।

এছাড়াও পরিষদের সদস্য বশিরের নামে বরাদ্ধ দেওয়া ডিপ-টিউবওয়েলের দশ হাজার টাকা আত্নসাৎ করার পর বুধবার তা চেয়ারম্যানে কাছে ফেরত দিয়েছে ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

পাশের দক্ষিন চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদেও নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারনে এবং চেয়ারম্যানের সাথে খারাফ আচরনের কারনে ৭ মাস সেখানে থাকার পর দক্ষিন চরবংশী পরিষদে বদলি হয়ে এসেছেন। সামান্য চাকুরীর বেতনে কিভাবে নীজের বাড়ীতে বহুতল আলিশান বাড়ীও রাস্তা নির্মাণ কাজ করছেন বলেও প্রশ্ন তোলেছেন।

দক্ষিন চরআবাবিল পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম জিকুও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার উদ্দীন দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা বলেও স্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোল্লারহাট বাজারের দুইজন ব্যাবসায়ীসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে পরিষদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বহুবার স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে (সাবেক ইউএনও ইমরান খান ও পিআইও) জানালেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে দাবি করেছেন তারা।

ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ৩টি দাবি তুলে ধরেছেন- সচিবের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত সচিবকে দ্রুত অপসারণ করে দুর্নীতিমুক্ত পরিষদ পরিচালনা নিশ্চিত করা।

এবিষয়গুলো নিয়ে দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার উদ্দীন বলেন, কয়েকজন মেম্বার অনৈতিক সুবিধা ভোগ করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা-ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন। আমি কোন অনিয়ম,  দূর্ণীতি ও আত্নসাতের ঘটনার সাথে জড়িত না।

এদিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার) মোঃ জসিম উদ্দীন বলেন, আমরা বিষয়গুলো জেনেছি।

নবাগত জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শেয়ার করুন....,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *