
গৌরীপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘মিড-ডে মিল’ শুরু
গৌরীপুর প্রতিনিধিঃ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বহু প্রতীক্ষিত স্কুল ফিডিং কর্মসূচি গৌরীপুরে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলেও উদ্বোধনী দিনে প্রত্যাশিত খাদ্যতালিকার বেশিরভাগই অনুপস্থিত ছিল।
টেন্ডারসংক্রান্ত জটিলতা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সোমবার শিক্ষার্থীরা ‘মিড-ডে মিল’ এ শুধু ইউএইচটি দুধ পেয়েছে। যদিও প্রথম দিন পুরো খাবার দেওয়া সম্ভব হয়নি, তবুও দুধ হাতে পেয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিশুদের মাঝে হাসি-উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
এ কর্মসূচির আওতায় উপজেলাব্যাপী ১৭৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৯ হাজার ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী সপ্তাহে পাঁচ দিন পুষ্টিকর খাবার পাবে। প্রথম দিন সব স্কুলে দুধ পৌঁছায়নি,তবে মঙ্গলবার সব স্কুলে পৌঁছে যাবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম জানান, প্রথম দিনের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সব বিদ্যালয়ে একযোগে দুধ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে দুপুরের মধ্যেই বাকি
বিদ্যালয়গুলোতেও বরাদ্দকৃত দুধ পৌঁছে যায়।
তিনি আরও বলেন, “অন্যান্য উপজেলায় পুরো খাবার বিতরণ শুরু হলেও গৌরীপুরে ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত রি-টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। এটি দ্রুত সম্পন্ন হলে বিস্কুট, কলা, মৌসুমি ফল, বনরুটি ও ডিম শিশুদের দেওয়া যাবে।”
অভিভাবকদের ক্ষোভ-গজন্দর গ্রামের অভিভাবক হোসেন আলী বলেন, “টেলিভিশনে দেখলাম—সব জায়গায় খাবার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সন্তানরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বঞ্চিত হচ্ছে।”
উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের অভিভাবক উম্মে কুলসুম জানান, “আজ যে খাবার বঞ্চিত হলো, পরে তো আর দেওয়া হবে না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে জটিলতা দূর করা জরুরি।”
যেসব স্কুলে দুধ পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছাত্রছাত্রীরা পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলতাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গজন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেখ লেবু স্মৃতি পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জাগরণী পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুধ বিতরণ কার্যক্রমে পরিষ্কার আনন্দ লক্ষ্য করা যায়।
তদারকিতে ছিলেন—মো. নজরুল ইসলাম, নাজমা খাতুন, মির্জা মোহাম্মদ, আবুল কালাম আজাদ, সাজ্জাদ হোসেন তালুকদার, সঞ্জয় কুমার বণিক ও ফারা নাজ পাঠান।
সপ্তাহজুড়ে খাবারের তালিকা-প্রকল্পের খাদ্যতালিকা অনুযায়ী-রবিবার: ১২০ গ্রাম বনরুটি+সিদ্ধ ডিম।সোমবার: বনরুটি+২০০ গ্রাম ইউএইচটি দুধ।মঙ্গলবার: ৭৫ গ্রাম ফর্টিফাইড বিস্কুট + কলা/মৌসুমি ফল। বুধবার: বনরুটি+সিদ্ধ ডিম। বৃহস্পতিবার: বনরুটি+সিদ্ধ ডিম।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, প্রস্তাবিত খাবারে শিশুদের দৈনিক প্রয়োজনীয় শক্তি, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, প্রোটিন ও ফ্যাটের উল্লেখযোগ্য অংশ নিশ্চিত করা হবে।
এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পুষ্টির মান, স্কুলে উপস্থিতি এবং শিক্ষায় মনোযোগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২৭ সাল পর্যন্ত চলবে কর্মসূচি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, নাটোরের গুরুদাসপুরের খুবজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কর্মসূচি চলবে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়, মিড-ডে মিল চালু হলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৮০% এর বেশি,ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে,ভর্তির হার বছরে ১০% এর বেশি বাড়বে,আর শিক্ষার্থীদের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের হার ৯০% এর বেশি হবে।