
রায়পুরে চরম ভোগান্তির নাম মহিলা কলেজ ও টিএনটি সড়ক-চলে না গাড়ি, হেঁটে চলাও কঠিন
তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। মহিলা কলেজ ও টিএনটি সড়ক প্রশস্ত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজের জন্য গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই থেকে এলাকার ভুক্তভোগীরা সড়কটির নাম দিয়েছে ‘খোঁড়া সড়ক’। বর্তমানে সড়কটিতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমনকি হেঁটে চলাচলেরও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি।
দীর্ঘ সময় কাজ স্থগিত আর বর্তমানে কাজের ধীরগতির কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এই বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খোঁড়ার কারণে ময়লা আবর্জনা আর বৃষ্টির পানি জমে একাকার। পুরো সড়কজুড়ে রয়েছে অসংখ্য বড় বড় গর্ত।
পাশেই রাখা পাইপ, ছোট-বড় নির্মাণযন্ত্র। কোথাও কাদাপানি, কাঁচা বাজারের আবর্জনা, আবার কোথাও বাসা-বাড়ির ময়লার স্তূপ। কখনো কখনো চোখে পড়বে মানুষের লাফিয়ে লাফিয়ে চলা, আবার কখনো বা খুব সাবধানে, সড়কের কোনো অংশে পা ফেলে কোনোমতে পেরিয়ে যাওয়ার মতো দৃশ্য।
রোববার দুপুরে এলাকাবাসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌরসভার প্রশাসক মো. মেহেদী হাসান কাউছার মহিলা কলেজ সড়কটি পরিদর্শন করেন। খুব দ্রুত কাজটি শেষ করে, জনসাধারণের নির্বিঘ্নে চলাচলের সুব্যবস্থা করতে ঠিকাদার জুয়েলকে নির্দেশনা দিয়েছে।
পৌরসভার ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের গোলা বাড়ী থেকে মহিলা কলেজ হয়ে নতুনবাজার মোড় পর্যন্ত সাড়ে নয় কোটি টাকা ব্যায়ে প্রায় ৯১৪ মিটার সড়ক প্রশস্ত করা সহ দুই পাশে ড্রেন করার উদ্যোগ নেয় পৌরসভা। এরপর এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে রাতারাতি বুলডোজার দিয়ে সড়কের পাশের সব বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটের সামনে অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি সড়কটি লন্ডভন্ড করা হলেও, কাজের কাজ কিছু করা হয়নি। সরকার পতনের কারণে হঠাৎই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেড়ে যায় এলাকাবাসীর ভোগান্তি। শুধু তাই নয়, রাস্তার কাজের কারণে আবাসিক ভবন ও দোকানপাটে সামনের অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। কয়েক মাস পর, নতুনভাবে ফের কাজ শুরু হলেও ধীরগতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটি এলাকার মানুষের দুর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে আছে। খানাখন্দগুলো এতই গভীর যে, বৃষ্টির পানি জমলে বোঝার উপায় থাকে না এটি একটি ঝিল না সড়ক। মানুষের এই দুর্ভোগ কতদিন থাকবে কিংবা কবে এই সড়ক ঠিক হবে সে ব্যাপারে নেই কারো কাছে কোনো সঠিক তথ্য।
সরেজমিন দেখা গেছে, রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের গোলা বাড়ীর সামনে থেকে মহিলা কলেজ হয়ে নতুনবাজার মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। উপজেলা পরিষদ, মহিলা কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, ১৫টির মতো এনজিও এবং হায়দরগন্জ বাজারে যাওয়ার খুব কাছে হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাস এই এলাকায়।
দীর্ঘদিন ধরে সড়কটিতে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় দুই পাশের প্রতিষ্ঠানগুলোসহ অত্র এলাকার সব ধরনের ব্যবসায় ধস নেমে এসেছে। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা এতই খারাপ যে, সারা দিনেও দোকানে একজন ক্রেতা আসে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। অধিকাংশ ব্যবসায়ী ক্ষোভে, দুঃখে বন্ধ করে রেখেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সড়কের এমন বেহাল দশার কারণে তিক্ত-বিরক্ত এলাকার ভাড়াটিয়ারা। এমন বিড়ম্বনা এড়াতে তারা বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক বাসা এখনও খালি পড়ে আছে।
নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা ও পাঁচতলা বাড়ির মালিক জাহাঙ্গির বলেন, খুব কাছের এলাকা হওয়ায় উপজেলা পরিষদ ও ব্যাংকে অনেক চাকরিজীবী নতুনবজার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। বিগত সময়ে কখনো আমার বাসার কোনো ফ্ল্যাট ফাঁকা থাকেনি। কিন্তু সড়কের কাজ চলমান থাকায় মানুষ পায়ে হেঁটেও ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারছেন না। তাই অনেকেই এই এলাকার বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌরসভার প্রশাসক মো. মেহেদী হাসান কাউছার বলেন, রোববার দুপুরে (২ নভেম্বর) মহিলা কলেজ সড়কটি পরিদর্শন করি। খুব দ্রুত কাজটি শেষ করে, জনসাধারণের নির্বিঘ্নে চলাচলের সুব্যবস্থা করতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর কাজও দ্রুত শেষ হবে।
উল্লেখ্য-এক প্যাকেজে সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে রায়পুরের মহিলা কলেজ সড়কটি ড্রেনসহ ৯১৪ মিটারের কাজ পান কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহমান ইন্জিনিয়ারিংয়ের মালিক মোঃ রহমান। তার কাছ থেকে কাজটি কিনে নিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের ঠিকাদার খন্দকার জুয়েল। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।
২০২৪ সালে মার্চ মাসে কাজটি ওয়ার্কওয়াডার হয়। শুরু করে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। ৮৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের মালের বাড়ী- ২৫০ মিটার ও জাকির পাটোয়ারী বাড়ী-১৫০ মিটার রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। দুই কোটি টাকা ব্যায়ে শহরের গাজি মার্কেটের সামনে থেকে ধানহাটা পর্যন্ত ৮’শ মিটারের ড্রেন ও ধান হাটা পর্যন্ত ড্রেনের কাজ চলছে।
পলাতক থেকে ঠিকাদার জুয়েল কাজ করছে। এছাড়াও পৌরসভার ৯-১০টি রাস্তা ও ড্রেনের কাজ চরমভাবে ডিলেঢালাভাবে করা হচ্ছে।
মোড়গহাটা, মহিলা কলেজ, গাজি মার্কেট, জাকির পাটোয়ারী, টিএনটি সড়ক, খান বাড়ী সড়ক, মধুপুরে হাবু মাওলানার বাড়ী সামনের রাস্তা, পৌর মার্কেট ২ কোটি ৮০ লাখ টাকার কাজ চলমান এবং এডিবি ও নগর উন্নয়নসহ প্রায় ৩৫ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে।