
মাওলানা ভাসানীসেতুতে বেড়েছে দুর্গতি-শঙ্কিত সাধারণ মানুষ
আবু বকর সিদ্দিকী, গাইকান্ধাঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তানদীর উপর নির্মিত মাওলানা ভাসানীসেতু উন্নয়নে সম্ভাবনার দ্বার খুললেও দেখা দিয়েছে গণ দুর্গতি।
জানা যায়, উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে তিস্তানদীর উপর নির্মিত মাওলানা ভাসানীসেতু গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম জেলাকে সেতুবন্ধনে যোগাযোগ ব্যবস্থা সু-দৃঢ় হওয়ায় সম্ভাবনার দ্বার খুললেও। বহুমূখী গণ দুর্গতি বেড়েছে। দেখা দিয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতা।
গত বুধবার (২০ আগষ্ট) উপজেলার পাঁচপীর বাজার-হরিপুরস্থ সংযোগ সড়কের চৌ-রাস্তা মোড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মাওলানা ভাসানীসেতু উদ্বোধন করা হয়। সেদিনই সন্ধ্যা থেকে রাতব্যাপী অন্ধকার হবার প্রশ্নে পরেরদিন গত (শুক্রবার) রাতে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ৮টি লাইটপোষ্টের বৈদ্যুতিক সংযোগ তার চুরির অভিযোগে অজ্ঞাতনামা চোরের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামালা দায়ের করা হয়।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মামলাটি করেন চায়না সাসেক প্রজেক্টের হরিপুর তিস্তা ব্রীজে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি ইনচার্জ নূরে আলম (৪০)।
১৪৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থের সেতুটি উদ্বোধনকাল থেকে এ পর্যন্ত মানুষের ঢলে যানবাহন চলাচলে মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। দিন-রাতব্যাপী অন্ধকারের মধ্যেও কমছেনা দর্শনার্থীসহ পথচারীদের ভীর।
সেতুটির উচ্চতা কম হওয়ায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই সেতুর নিচ দিয়ে দূরপাল্লার নৌযান চলাচলে বাধার সৃষ্টি, মূল সেতুর উত্তরে ৮’শ মিটার দূরত্বে নির্মিত হাতিরঝিলের ন্যায় নির্মিত ৯৬ মিটারের আর্চব্রিজ পর্যন্ত কোন যাত্রী ছাউনি না থাকায় দূর্যোগ ঝুঁকি, পথচারী-দর্শনার্থীসহ যানবাহন চলাচলে পুলিশ বক্স বা ট্রাফিক সঙ্কেতের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, নৌ-পুলিশের টহল না থাকায় চরম ঝুঁকিতেই ভুগছেন মানুষজন।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলছেন জন সমাগমে এ পর্যন্ত ২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।মূল সেতুর সঙ্গে ১৯টি প্যাকেজ সম্পন্ন করতে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর ২০২৩ সালের মে মাসে নির্মাণ শেষে জুন মাসেই যোগাযোগের জন্য সেতুটি খুলে দেয়ার কথা ছিল। এরপর উদ্বোধনের আরো ৪ বার সময় পিঁছিয়ে যায়। সম্পূরক প্রকল্প বান্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৯২৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি), ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে ও এলজিইডি’র তত্বাবধানে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।
এরমধ্যে এসএফডি’র ৬৩২ কোটি ও বাংলাদেশ সরকারের ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পূরক প্রকল্পের মূলসেতুর সঙ্গে অন্যান্য ব্রিজ-কালভার্ট, ৬ কিলোমিটার নদী শাসন, জমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়ক উল্লেখযোগ্য বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়।
লাইটপোষ্টের তার চুরির মামলার বাদী নূরে আলমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে স্ত্রী ফোনকল রিসিভ্ড করে তার স্বামীর অসুস্থ্যতার কথা বলেন।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুন্দরগঞ্জ থানার এসআই নওশের আলী জানান, মামলাটি হবার পর থেকে ব্যাপক অনুসন্ধান (তদন্ত) চলছে।
থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাকিম আজাদ জানান, লাইটপোষ্টের বৈদ্যুতিক তার চুরির মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। নৌ-পথে নিরাপত্তায় নৌ-পুলিশী টহল আছে কি-না; তা জানা নেই। তবে, থানার পক্ষ থেকে গণমানুষের নিরাপত্তায় পুলিশী টহল রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিনার রাজ কুমার বিশ্বাস এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মাওলানা ভাসানীসেতু এলাকায় নিরাপত্তার জন্য একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ আগষ্ট আনুষ্ঠানিকভাবে মাওলানা ভাসানীসেতু উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটি উদ্বোধনের ফলে গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামের সেতুবন্ধন সৃষ্টিতে পারস্পারিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সু-দৃঢ় হবে।
এতে কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব কমেছে কমপক্ষে ৬০ কিলোমিটার।
লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানবিকসহ নানা দিক থেকে উন্নয়নের সম্ভাবনার দ্বার খুললেও বহুমূখী ঝুঁকিতে ভুগছেন মানুষজন।
এছাড়া, ২০১২ সালে এ প্রকল্পটি অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। শিডিউল অনুযায়ী অর্থ ছাড়ের পর ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।