
লাকসাম-মনোহরগঞ্জ সড়ক উন্নয়নে কাজ ৫৪ বছরেও শেষ হয়নি
মশিউর রহমান সেলিম, লাকসামঃ
কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জ দীর্ঘ ১২ কিঃ মিঃ আঞ্চলিক সড়ক উন্নয়নে বিগত ৫৪ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। বিশ্ব ব্যাংক, এলজিইডি ও এডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দাতা সংস্থা এর অর্থায়নে বিপুল পরিমান অর্থ বরাদ্দ দিলেও চলছে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা ঠিকাদারদের হরিলট ও লুটপাটের মহোৎসব।
বিভিন্ন সময় এ উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারদের পেশী শক্তির দৌরাত্বে স্থানীয় প্রশাসন যেন অসহায়।
গত ২৪ এর বন্যায় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্যাপক। চলমান সময়ে সড়কটি জনচলাচলে অবর্ননীয় দূর্ভোগ ।
সড়কটির লাকসাম অংশে কিছুটা ভালো হলেও মনোহরগঞ্জ অংশে খানা-খন্দে ভরা।
গত অর্থ বৎসরে ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে সড়কটির মনোহরগঞ্জ অংশে পুনরায় কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দে উন্নয়ন কাজ শুরু হলেও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন যেন নিরব দর্শক।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ওই সড়কটির উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ এবং কাজের সঠিক মান নিয়ে জনমনে হরেক রকম কানা ঘুষা চলছে।
গত অর্থ বছর গুলোতে বিপুল পরিমান অর্থ বরাদ্দে লাকসাম থেকে আশিরপাড় বাজার পর্যন্ত ৬ কি: মি: ৪’শ মিটার সড়কের কাজ স্থানীয় ঠিকাদারের দায়িত্বহীনতা, অনিয়ম ও স্থানীয় প্রশাসনের তদারকির অভাবে অনেক দিন যাবত অব্যবস্থাপনায় পড়ে রয়েছে। চলমান এ সড়কটির উন্নয়নের নামে বিনা প্রয়োজনে দু’পাশের শত শত হরেক রকম গাছ কেটে ফেলা হয়েছে কার স্বার্থে এরমধ্যে আবার অসংখ্য তালগাছও রয়েছে এবং সড়কের দু’পাশের পুরানো শক্ত মাটি তুলে নতুন করে বালু ফেলে সড়কের দু’পাশ বড় করা কিন্তু নিয়ম বর্হিভূত। মূলকথা ওই সড়কের উন্নয়ন ঘিরে অনিয়ম ও দূর্নীতির মহোৎসব চলছে।
বিগত অর্থবছর গুলোতে এ সড়কের উন্নয়নে নিম্নমান সামগ্রী ব্যবহার করার প্রতিবাদ করতে গেলে স্থানীয় জনৈক মিডিয়াকর্মীকে মারধরসহ লাঞ্চিত করেছে ঠিকাদারের ক্যাডার বাহিনী।
সূত্রটি আরও জানায়, বিগত অর্থ বছরগুলোতে ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে নব গঠিত মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর এ সড়কটির উন্নয়ন আরো তরান্বিত করতে দীর্ঘ ৫৪ বছর বিভিন্ন্ সরকার উদ্যোগ নিলেও রহস্যজনক কারনে মাঝ পথে থেমে যায়। ১৯৬৭-৬৮ সালে সড়কটির উন্নয়নে লাকসাম মোহাম্মদপুর পর্যন্ত ৩ কিঃ মিঃ ব্রিক সলিংয়ের কাজ শুরু হয়। তৎকালীন এরশাদ সরকারের শাসনামলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম মোকছেদ আলী ১৯৮৪-৮৫ সালে সড়কটির উন্নয়নে মনোহরগঞ্জ বাজার থেকে গোয়ালিয়ারা পর্যন্ত ২ কিঃ মিঃ রাস্তা পাকাকরনের কাজ শেষ করে ক্ষান্ত হন। ১৯৯২ সালে সাবেক এমপি এটিএম আলমগীর ক্ষমতায় আসলে সড়কটির উন্নয়ন ৫০ ভাগ কাজ শেষ না করতেই রহস্যজনক কারনে বন্ধ হয়ে যায় এ সড়কটির উন্নয়ন। ওইসময় এ সড়কের ১৬ টি ব্রিজ-কালভার্ট নির্মানের নামে চলছিলো হরিলুট।
এছাড়া অনেকস্থানে প্যালাসাইডিং, রিটানিং ওয়াল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ নিয়ে চলছিল তোঘলগি কারবার। ২০০৮-২০২৪ সালে বিগত আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে স্থানীয় এমপি তাজুল ইসলাম এ সড়কটির উন্নয়নে একাধিকবার বিপুল অর্থ বরাদ্দে কাজ শুরু করেছে। তবে ইট, খোয়াসহ বিভিন্ন নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হওয়ায় সড়কটি মেরামতের কাজ নিয়ে এলাকার জনমনে প্রশ্নবিদ্দ। বর্তমানে ঠিকাদারের দায়িত্বহীনতা, অনিয়ম, দূর্নীতির কারনে উন্নয়নকাজে ধীরগতি হওয়ায় জনগণের দূভোর্গ আরও বেড়েই চলেছে। এ উন্নয়নে কাজে প্রশাসনিক কোন তদারিক নেই। মনে হচ্ছে যে যার মতো পকেট বানিজ্যে ব্যস্ত।
এছাড়া জেলা দক্ষিনাঞ্চলের সবকটি সড়কের উন্নয়ন কাজ নিয়ে নানান কথাবার্তা উঠেছে এলাকার জনমনে এবং উন্নয়নকৃত সড়কগুলোর ভবিষ্যত অনেকটাই ঝুকিপূর্ন ও স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব এবং ভূমিকা নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।
এ বিষয়ে জেলা-উপজেলা স্থানীয় সরকার দপ্তর, এলজিইডি ও এডিবিসহ উন্নয়নসহযোগি বিভিন্ন দাতাসংস্থার একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এ সড়কের উন্নয়ন নিয়ে কিছুটা অনিয়ম ও ধীরগতির কথার সত্যতা স্বীকার করে স্থাণীয় প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, নিম্নমানের কোন সামগ্রী সড়কের কাজে ব্যবহৃত হলে অথবা সাইটে থাকলে এবং সড়কের দুপাশের গাছ কেটে নেয়া ও পুরাতন শক্ত মাটি তুলে নতুন বালু দিয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত সাপেক্ষে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।