
গাজীপুরে সাংবাদিকের
রহস্যজনক মৃত্যু !
গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের এক রিসোর্টে অনুসন্ধানী সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমনের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে প্রশ্নের ঝড় উঠেছে সাংবাদিক মহল থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে অনুসন্ধান করা এই সাংবাদিকের মৃত্যুর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস মিলছে বিভিন্ন সূত্রে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সাইদুর রহমান রিমনের সঙ্গে গাজীপুর যাওয়ার ঠিক একদিন আগে সন্দেহের তীরে থাকা ব্যক্তির সন্দেহজনক বৈঠক আরও সন্দেহ বাড়ায়।
জাতীয় প্রেসক্লাবে দুপুর বেলায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা খন্দকার আলমগীর এবং বিতর্কিত সাংবাদিক সরদার জামালের মধ্যে এক গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদের দুজনেই জামায়াতপন্থী বলেই পরিচিত।
সে ইসাথে সরদার জামাল একজন মাদক ব্যবসায়ী ও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ-সুবিধাভোগী ব্যক্তি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত।
জানা গেছে, সরদার জামাল ও খন্দকার আলমগীর একসাথে ডেভেলপার ব্যবসার পার্টনার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
অবাক করা তথ্য হলো, গুরুতর অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে সরদার জামাল রিমনের সঙ্গে গাজীপুরের রিসোর্টে মদ্যপানে লিপ্ত ছিলেন।
এই অস্বাভাবিক সিদ্ধান্তই অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্ন—এমন কী গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল যে, স্ত্রীর মৃত্যু পথযাত্রী অবস্থাতেও সরদার জামাল ছুটে গেলেন রিমনের সঙ্গে রিসোর্টে ?
রিমনের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, তিনি সম্প্রতি বন বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে একটি ৮ পৃষ্ঠার রঙিন সংখ্যার কাজ করছিলেন, যা প্রকাশের ঠিক আগেই তিনি রহস্যজনকভাবে মারা যান। এই সংখ্যার কাজের জন্যই নির্জন রিসোর্টটি বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা।
ধারণা করা হচ্ছে, বন বিভাগের কেউ একজন তাঁর সঙ্গে সঙ্গী হিসেবে গিয়ে এজেন্টের ভূমিকায় কাজ করেছে, যার মাধ্যমে তাঁর পানীয় বা খাবারে এমন কিছু মেশানো হয়েছিল যা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
এদিকে সাংবাদিক রিমনের মৃত্যুকে ঘিরে আলোচনায় এসেছে মাদক গবেষণাসংক্রান্ত একটি তথ্য, যা আরও রহস্যময় করে তুলেছে এই মৃত্যু।
গবেষণা অনুযায়ী, ১০০ পিস ইয়াবার প্যাকেটের সঙ্গে থাকা বিশেষ একটি (কন্ট্রোলার ট্যাবলেট) থাকে সেটি যদি পানীয় বা কফির সঙ্গে মিশিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে খাওয়ানো হয়, তাহলে উচ্চ রক্তচাপজনিত হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু ঘটতে পারে।
এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অনেকেই শারীরিক অস্বস্তির কারণে পানি বা গোসলের চেষ্টা করে থাকেন—হয়তো এমনটাই ঘটেছে রিমনের ক্ষেত্রেও।
বিজ্ঞানের হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—রিমনের মৃত্যুর পর তাঁর শরীরে করা ব্লাড রিপোর্টে ট্রোপোনিন (Troponin) নামক হৃদযন্ত্র-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটির কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
অথচ প্রকৃত হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু ঘটলে রক্তে ট্রোপোনিনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায় এবং তা ৭-১০ দিন পর্যন্ত থাকে। কিন্তু হাসপাতালে করা এই রিপোর্টই রিমনের মৃত্যুকে ‘প্রাকৃতিক মৃত্যু’ নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অন্যদিকে, রিমনের অতীত কর্মকাণ্ডেও অনেকে হত্যার সম্ভাবনা খুঁজছেন।
জঙ্গি সংগঠন, গুপ্ত হামলা ও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে তাঁর একের পর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জামাতপন্থী গোষ্ঠীর রোষানলে পড়েছিল বারবার।
সেই কারণে তাঁর ওপর পরিকল্পিত প্রতিশোধ নেয়া হতে পারে বলেও মত প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।
সব মিলিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমনের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়—এমনটি ভাবছেন অনেকেই। মৃত্যুর আগেই চূড়ান্ত ধাক্কা দিতে রিসোর্টে নেওয়া হয়, তার খাবারে কিছু মেশানো হয়, এরপর মৃত্যুর বিষয়টি ‘স্বাভাবিক হার্ট অ্যাটাক’ হিসেবে চালিয়ে দিতে চেষ্টাও চলে। কিন্তু ট্রোপোনিন রিপোর্টের অসামঞ্জস্যতা, সরদার জামালের উপস্থিতি, জামাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা, এবং বন বিভাগের সঙ্গে চলমান অনুসন্ধান—সব কিছুই মিলে এই মৃত্যু রহস্য আরও ঘনীভূত করছে।
এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, তা এখন তদন্ত সাপেক্ষ। তবে সাংবাদিক সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা রিমনের মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন।
https://www.sangbadtoday.com/%e0%a6%97%e0%a7%8b%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%9f%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%9b-%e0%a6%ad%e0%a7%87%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a7%87-%e0%a6%97/