
আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামীকাল শনিবার (১৯ জুলাই) জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই সমাবেশের মাধ্যমে মূলত অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে নিজেদের শক্তিমত্তার বার্তা দিতে চায় দলটি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো এককভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এর আগে বিএনপির সঙ্গে যৌথভাবে কিছু সমাবেশে অংশ নিলেও এককভাবে এটিই তাদের প্রথম সমাবেশ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন রাজধানীতে বড় বড় সমাবেশ করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশ এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বিভিন্ন ইস্যুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করেছে। বিএনপি নয়াপল্টনে কয়েক দফা সমাবেশ করলেও জামায়াতে ইসলামী কেবল কারাবন্দি নেতা (বর্তমানে মুক্ত) এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে পুরানা পল্টন মোড়ে একটি সমাবেশ করে ছিল।
সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সমাবেশের ডাক দিলেও এর অন্তরালে কৌশলগত নানা হিসাব-নিকাশ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সকল গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, ‘জুলাই সনদ’ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন ও এক কোটিরও বেশি প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছরে আমরা নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছি, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার হারিয়েছি। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা যতটুকু ভোগ করছি, তারই ধারাবাহিকতায় আজ জাতীয় সমাবেশ করার সুযোগ পাচ্ছি।
জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। তারা ইসলামী দলগুলোকে পাশে চায় এবং ইসলামপন্থি ভোটারদের একত্রিত করার চেষ্টা করছে। সমাবেশ থেকে নির্বাচনসংক্রান্ত অবস্থান, বিচার ও সংস্কার প্রশ্নে বার্তা দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর জামায়াত অনেকটা সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে। তারা এরই মধ্যে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লাসহ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে। এবার তাদের লক্ষ্য নির্বাচনে শক্তি প্রদর্শন।
৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর এটি হবে জামায়াতের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ। রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কেউ কেউ এটিকে নির্বাচনপূর্ব কৌশলগত অবস্থান হিসেবেও দেখছেন। জামায়াত বলছে, এটি শুধু দলীয় সমাবেশ নয়, বরং দেশের সাধারণ মানুষের ন্যায্য দাবির প্রতিচ্ছবি।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ সমাবেশ হবে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েত। এজন্য ট্রেন ও লঞ্চ বাদ দিয়ে ভাড়া করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বাস। সমাবেশে ১০ লাখের বেশি নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে থাকবেন ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
সমাবেশস্থলে থাকবে ১৫টি মেডিকেল বুথ, ১৫টি পার্কিং স্পট এবং সমাবেশ বাস্তবায়নে গঠিত হয়েছে ৮টি উপ-কমিটি।
শনিবার বেলা ২টায় মূল সমাবেশ শুরু হবে। তবে সকাল ১০টা থেকে জামায়াতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন ইসলামী দল ও রাজনৈতিক দলের নেতা, জুলাই শহীদ পরিবার এবং আহত ব্যক্তিরা।
সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে সম্ভাব্য যানজট বা ভোগান্তির জন্য নগরবাসীর কাছে আগাম দুঃখপ্রকাশ করেছে জামায়াত এবং এটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ জানিয়েছে।
জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা ঐতিহাসিক জমায়েত করতে চাই সোহরাওয়ার্দীতে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার, তা নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে। যেন এ বিচার নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান হয়। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে না পারে।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এককভাবে জামায়াতের এটাই প্রথম জনসভা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনমত গঠন করাই আমাদের লক্ষ্য।
জাতীয় সমাবেশের উদ্দেশ্যে চৌদ্দগ্রাম জামায়াতের ১০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায়